নটর ডেম কলেজ নিয়ে স্মৃতিচারণ
বাপ্পারাজ
“আমি বাপ্পারাজ। আপনাদের ভালোবাসার নায়ক বাপ্পারাজ।
‘চাপাডাঙার বউ’ চলচ্চিত্র দিয়ে আমার অভিনয়জীবনের শুরু। নটর ডেম কলেজ থেকে পাশ করার ঠিক তিন বছর পরে পুরোদস্তুর অভিনয়ে নামি। এরপর একে একে করতে থাকি ‘গরীবের ওস্তাদ’, ‘প্রেমের সমাধি’, ‘বাবা কেনো চাকর’ সহ প্রায় শতাধিক সিনেমা। সে যাকগে।
আজকে আমার কলেজ জীবন নিয়ে কথা বলবো। আমি নটর ডেম কলেজে ভর্তি হই ১৯৮১ সালে, মানবিক বিভাগে। পাশ করেছি ১৯৮৩ সালে। তার মানে, আমি ১৯৮৩ ব্যাচের নটরডেমিয়ান।
আমার খুব মনে আছে, ছোটোবেলায় যখন মতিঝিলের ওইদিকটায় যেতাম, নটর ডেমের আঙিনা আমাকে বিশেষভাবে টানতো। প্রায়ই বাবা-মাকে বলতাম, “আমি নটর ডেম কলেজে পড়বো কিন্তু।” আমার বাবা নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব বলতেন, “ওখানে তুমি চান্স পেলে আমি খুবই খুশি হবো।” বাবা যেদিন আমাকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলেন, তাঁর খুশি দেখে কে! বাবা তখন খুবই জনপ্রিয় মানুষ, সকলেই তাঁর সাথে কথা বলতে আসে। সেদিন বাবা সবার সাথেই কথা বললেন, সবাইকে নিজের মতো আরেকজন অভিভাবক হিসেবে ট্রিট করলেন।
বাবা আমাকে ভর্তি করালেন। আমাদের সময় প্রিন্সিপাল ছিলেন ফাদার পিশোতো। তিনি ছিলেন ফিজিক্সের মানুষ, সংগত কারণেই তাঁর ক্লাস আমাদের করা হয়নি। তবে প্রিন্সিপাল হিসেবে আমাদের উপর তাঁর প্রভাব ছিলো সাংঘাতিক। তাঁর দক্ষতা অতুলনীয়। ফাদার পিশোতোকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি। বাবার সাথে তাঁকে গল্প করতে দেখেছি বেশ অনেকবার। বাবা আর ফাদার পিশোতো দু’জনেই দু’জনকে খুব সম্মান করতেন। একবার কলেজের বাস্কেটবল কোর্টে খেলার সময় ফাদার পিশোতোকে আমি টিমমেট হিসেবে পেয়েছিলাম। ফাদার খেলা শেষে বললেন, “টোমার সাথে খেলে থো নিজেখে নায়খ নায়খ লাগছে।” তাঁর বলা বাংলা কথাগুলো আমার কানে বাজে আজও। কলেজ থেকে পাশ করার পরে ফাদার পিশোতোকে আর দেখিনি। শুনে খুব ভালো লাগছে, ফাদার এখনো বেঁচে আছেন। একদিন গিয়ে দেখা করে আসবো তাঁর সাথে।
কলেজে আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিলেন হামিদ স্যার ( মিয়াঁ মুহম্মদ আব্দুল হামিদ ) আর গরীব নেওয়াজ খান। কেউ যদি আমাকে বলেন, আমার প্রিয় বিষয় কী? আমি বলি, বাংলা। এটার কারণ হামিদ স্যার আর গরীব নেওয়াজ স্যার। হামিদ স্যার পান চিবোতে চিবোতে পড়াতেন। তাঁর ক্লাসে আমরা এতো মনোযোগ দিতাম! আর পুরুষ মানুষের কণ্ঠ যে এতো মধুর হতে পারে, তার উদাহরণ গরীব নেওয়াজ স্যার।
খুব খারাপ লাগলো, যখন শুনলাম, তাঁদের কেউই বেঁচে নেই।
নটর ডেম কলেজের শিক্ষকদেরকে আমার খুব মনে পড়ে। সবাই কাছ থেকেই বিশেষ স্নেহ পেয়েছি, তাঁরা সবাই আমার যৌবন-পূর্ব কৈশোরকে পরিপূর্ণ আনন্দস্মৃতি দিয়ে ভরে তুলেছিলেন।
আমার কর্মজগতের অনেক কলিগই নটরডেমিয়ান ছিলেন। দেখেছি, সবার মধ্যেই একটা অন্যরকম আত্মবিশ্বাস। পরিমিতিবোধ আর ভদ্রতাজ্ঞান নটরডেমিয়ানদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতো।
আমরা তিন ভাই-ই নটরডেমিয়ান। আমাদের বাবা খুব করে চাইতেন, আমরা যেনো ভালো করে পড়াশোনা করি, ভালো ভালো জায়গায় পড়াশোনা করি। তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে কতোটা মনোযোগী ছিলেন, তার বড় প্রমাণ কিন্তু এটাও যে, আমরা তিন ভাই-ই নটর ডেম কলেজে পড়েছি।”
© NotreDamians Worldwide
Leave a Reply