1. admin@pathagarbarta.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

নেতাজির আদর্শ আজ জরুরি

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২
  • ১৯০ বার পঠিত

নেতাজির আদর্শ আজ জরুরি
লিয়াকত হোসেন খোকন

২০২২ সাল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মর ১২৫ তম বর্ষপূর্তির বছর। সুভাষচন্দ্র বসু যখন প্রথমবার কংগ্রেসের সভাপতি হন, সে সময় গান্ধীজির অনুমোদনক্রমে জওহরলাল নেহেরু তাঁর নাম উত্থাপন করেছিলেন এবং সর্বজনের সমর্থনে বিপুল উৎসাহের মধ্যে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসুর মত ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ ভারতকে নিতে হবে স্বাধীনতার জন্য। পরাধীন জাতির শত্রুর শত্রু তার মিত্র কেজো রাজনীতির এই সূত্র গান্ধীজির আদর্শের পরিপন্থী ছিল। গান্ধীজির ধারণায় শত্রুর বিপদের সুযোগ নেওয়া অহিংসার আদর্শ নয়। অহিংসার সঙ্গে রিয়েলপলিটিকের মিলন সম্ভবপর নয়। তাই মত ও পথের ক্ষেত্রে দু’জনের পার্থক্য ছিলই। ১৯৪০ সালে যখন অসুস্থ সুভাষচন্দ্র বসুকে এলগিন রোডের বাড়িতে নজরবন্দি রাখা হয় তখন গান্ধীজি তাকে বলেন, you are irrepressible whether ill or well। গান্ধীজি অর্থাৎ বাপুজি জানতেন, সুভাষকে দমিয়ে রাখা যাবে না। দেশবিভাগের সময় নিঃস্ব গান্ধী সুভাষচন্দ্র বসুর খুব প্রয়োজন অনুভব করেন। গান্ধীজি কখনোই বিশ্বাস করতে চাননি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর কথা।

নেতাজিকে নিয়ে বাঙালিদের যতটা উন্মাদনা, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভালোবাসা রয়েছে মণিপুরী ও পাঞ্জাবিদের মধ্যে। তবে বাঙালিদের মধ্যে আছে আবেগ, কিন্তু তিনি যা চেয়েছিলেন, সেই লক্ষ পূরণে বাঙালিদের কোনো তাগিদ নেই। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরও সুভাষচন্দ্র বসু কেন দেশে ফিরে এলেন না বলে যাঁরা আজ কুমিরের কান্না কাঁদেন কিংবা গুমনানি বাবা বা শৌলমারির সাধুই নেতাজি কিনা তা নিয়ে পেজো তর্কে দেশকে মাতান, তাঁদের অন্তত একটা সত্য জেনে রাখা উচিত, সাতচল্লিশের পরের পাপভূমি সংস্কার করা নেতাজির আয়ত্তের বাইরে ছিল। উপমহাদেশ যদি সত্যিই স্বাধীন হত, তবে স্বাধীনতার পরও ব্রিটিশদের তৈরি আইনকানুন ও জঞ্জাল ভরা প্রশাসন কেন ছিল বা কেন আছে? সমাজে যাঁদের ঘৃণ্য হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত ছিল, সেই ব্রিটিশ চররা একই প্রতিপত্তিতে গর্বের সঙ্গে উপমহাদেশের দেশগুলির প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত কেন বহাল তবিয়তে রয়ে গেলেন? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এ হেন ব্রিটিশদের খোশামোদি করা প্রশাসন চাননি। আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি বারবার বলেছিলেন, প্রশাসন একেবারে ঝেঁটিয়ে সাফ করে পুনর্গঠন করতে হবে। কিন্তু লড়াই করে স্বাধীনতা না পেয়ে উপঢৌকন হিসাবে ক্ষমতা পেলে দাতার যাবতীয় শর্ত মাথা পেতে মেনে নিতে হয়। তাই, ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট বা ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের চুক্তি মানতে সে সময় কেন, আজও উপমহাদেশের দেশগুলির সরকার আজও কেন বাধ্য। ক্ষমতা হস্তান্তরের ওই চুক্তিতে সাফ জানানো হয়েছিল, সুভাষচন্দ্র বসুকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে ফিরতেন? অথচ আমাদের বাংলাদেশকে এহেন দাসত্বের শর্তে স্বাধীনতা পেতে হয়নি। ভারত-পাকিস্তানেরই এ এক চরম দুর্ভাগ্য। আর তাই ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও প্রথম স্বাধীন ভারত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে স্বাধীন ভারতে নিজের পরিচয় জানিয়ে পা রাখার সুযোগ কোনো দিনই হয়নি। আরো মজার ব্যাপার হল, সে সময়ের বিপ্লবীদের চোখে ঘৃণ্য গোয়েন্দা, ইতিহাসবিদ ও প্রশাসকরাই পরে মেকি দেশপ্রেমিক সেজে ওই বিপ্লবীদেরই জীবনী ও ইতিহাস পর্যন্ত লিখেছেন। আর তা পাঠ্যপুস্তক হিসাবে পড়ানো হয়। ইতিহাস বিকৃতির সেই সূচনা, যা আজও চলছে। এভাবে প্রতি মুহূর্তেই নেতাজিকে অপমান করে যাওয়া কি হচ্ছে না? আজ শুধু ভারতের নয়, সকল দেশের দৈন্যদশা থেকে মুক্তির পথ হল, নেতাজির ভাবাদর্শে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আমূল বদল।

নেতাজির জাতীয় শিক্ষানীতি বা অর্থনৈতিক উন্নতির নীতি কি উপমহাদেশের দেশগুলি কোনোদিন রূপায়ণের চেষ্টা করেছে? তাঁর জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, সব ধরনের সামাজিক বৈষম্য ও বাধা সরিয়ে শৈশব থেকেই দেশের প্রত্যেকের মধ্যে দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা, জাতীয়তাবোধ জাগাতে হবে। সম্প্রদায়গত বিভেদের মূল উচ্ছেদ করতে হবে। নেতাজি বলেছিলেন, ধর্মের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ গড়ার মদত দিলে একই দেশের মধ্যে গড়ে উঠবে মুসলিম ভারত, হিন্দু ভারত ও খ্রিস্টান ভারত। হিন্দুদের যেমন ইসলামি সংস্কৃতি জানা উচিত, তেমন মুসলমানদেরও হিন্দু সংস্কৃতি জানা উচিত। এই আদান প্রদানের শিক্ষাই একমাত্র সাম্প্রদায়িকতার মূল উপড়ে ফেলতে পারে। আর উপমহাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কৃষিক্ষত্রের পাশাপাশি শিল্পের উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনায় জোর দিয়েছিলেন। এজন্য ১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই প্রথম জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গড়েন। কৃষিক্ষত্রের পাশাপাশি গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ ও বৃহৎ শিল্পের আনুষঙ্গিক শিল্প হিসাবে গ্রামের মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা রূপায়িত করলে আজ উপমহাদেশের দেশগুলির এই হাঁড়ির হাল হয় না।

আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার দর্শনই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রূপায়িত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ উপমহাদেশে কি-ই না অবস্থা। সবাই যেন নিজেদের ভেতরের অসীম শক্তির ওপর ভরসা করার ক্ষমতা খুইয়েছে। আর কাজকর্ম ছেড়ে হয় সরকারের কাছ থেকে ছিটেফোঁটা পাওয়ার আশায় সরকারের পক্ষে আর নাহলে প্রত্যাশা মতো না পাওয়ায় সরকারের বিরোধিতায় রাজনীতির তরজা চালাচ্ছে। মানুষ গড়ার শিক্ষকরা এখন কারখানার মজদুরের মতো আন্দোলন করেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষার কারখানা গড়ে উঠেছে। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক হয়েছে দেনা-পাওনার সম্পর্ক। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ গেলানোর এই হল করুণ পরিণতি। আর এ জন্য আজ দেশে দেশে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ বোঝার তাগিদই আজ জরুরি।

নেতাজি ও এমিলির ভালবাসা আজও অনেককে রোমাঞ্চিত করে। অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তীর সুভাষ ও এমিলি বিবাহ রহস্য গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এদেশে প্রথম নেতাজির বিয়ের খবর প্রকাশ পেল কাশীর সন্মার্গ পত্রিকায়। লেখা হয়েছিল, নেতাজি এক অস্ট্রিয়ান মহিলার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। মহিলার নাম এমিলি শেঙ্কল। তিনি ছিলেন নেতাজির টাইপিস্ট ও সেক্রেটারি। তাঁদের একটি আট বছরের পুত্র সন্তান আছে। খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। চঞ্চল হয়ে ওঠে বাঙলাদেশ। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁদের প্রিয় নেতাজি একজন শ্বেতাঙ্গিনীকে বিয়ে করতে পারেন। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৩৪ সালে। নেতাজি তখন ভিয়েনায়। দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল বইটি লেখা হয়ে গেছে। টাইপ করতে হবে, তার জন্য ভাল ইংরেজি জানা একজন টাইপিস্ট দরকার। অস্ট্রিয়ার মেয়ে এমিলি তখন একটা কাজ খুঁজছেন। দু’জন মহিলার ইন্টারভিউ নিলেন নেতাজি। ২৩ বছর বয়সী ফ্রয়লাইন এমিলি শেঙ্কল নির্বাচিত হলেন। হলেন সুভাষ বসুর কপিরাইটার। তারপর সুভাষচন্দ্র ভারতে ফিরে এলেও দু’জনের যোগাযোগ ছিল। ১৯৪১ সালে মহানিষ্ক্রমণ। কলকাতা থেকে ইংরেজের চোখে ধুলো দিয়ে নেতাজি গোপনে পৌঁছলেন বার্লিন। ভিয়েনায় এমিলির সঙ্গে তিনি দেখা করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চালানোর জন্যে তিনি একটি সংগঠন তৈরি করেন। এমিলিকে দায়িত্ব দেন দপ্তরের কাজ সামলানোর। দু’জনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হল। প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে। আনুমানিক ১৯৪১ সালেই ৪৪ বছর বয়সে নেতাজি এমিলিকে বিয়ে করেন। ১৯৪২ -এর ২৯ নভেম্বর তাঁদের কন্যা অনিতার জন্ম। তার কিছুদিন পরেই নেতাজির জাপান যাওয়ার আহ্বান আসে। সাবমেরিনে উঠে বসেন নেতাজি। আর এমিলির সঙ্গে দেখা হয়নি। সন্মার্গ পত্রিকা ভুল করে লিখেছিল, সুভাষ-এমিলির একটি আট বছরের পুত্র সন্তান আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে, এতগুলো বছর খবরটা জানা যায়নি কেন? তার কারণ, এমিলি ও অনিতার নিরাপত্তা। তখন অস্ট্রিয়া ছিল প্রধান রণক্ষেত্র। মিত্রবাহিনী অস্ট্রিয়ার দখল নিলে নেতাজির স্ত্রী ও কন্যার কথা জানতে পারলে তাঁরা বিপদে পড়বেন। জার্মানিতে বসবাসকারী নেতাজি ঘনিষ্ঠ ভারতীয়রা জানতেন বিয়ের কথা। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তাঁরা কেউ প্রকাশ করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নেতাজির বিয়ের খবরটি প্রকাশ্যে আসে। ১৯৫১ সালের ১২ এপ্রিল একটি পত্রিকা এমিলির ছবি সহ নেতাজির বিয়ের খবর প্রকাশ করে। ১৯৪৩ এর ৮ ফেব্রুয়ারি নেতাজি জাপান যাওয়ার জন্যে সাবমেরিনে চড়ে বসলেন। যাওয়ার আগে ওই তারিখেই বিয়ের খবরটি তাঁর মেজদা শরৎচন্দ্র বসুকে একটি চিঠিতে লিখে যান। ১৯৪৮ সালে শরৎচন্দ্র বসু যখন নিজের চিকিৎসার জন্যে ভিয়েনায় আসেন তখন নেতাজির লেখা সেই চিঠি তাঁর হাতে আসে। ভ্রাতৃবধূ এমিলি ও ভাইঝি অনিতার সঙ্গে তিনি দেখা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শরৎচন্দ্র বসু এমিলি ও অনিতাকে ভারতে পাকাপাকি ভাবে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই সময়েই শরৎচন্দ্র বসুর আকস্মিক মৃত্যুতে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। শরৎচন্দ্র বসু ৮৬ বছর বয়সেই ভিয়েনাতে মারা যান। পরোক্ষভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন সুভাষ বসুর স্ত্রী এমিলি।

লেখক : প্রাবন্ধিক; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!