বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন
লিয়াকত হোসেন খোকন
নিয়মিত বই পড়লে জীবনের চলার পথকে মসৃণ করে দিতে পারে। কিছু কিছু বই আছে যা বৃদ্ধ বয়সেও পড়ে অতীতের কত ভুল চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে। তখন আপসোস করা ছাড়া কিছুই থাকে না। তবে আগে জানলে জীবন আরও বিকশিত হতে পারত। তাতে কি, আপাতত বই পড়ে জ্ঞান অর্জন সম্ভব। অজানাকে জানা সম্ভব হবে – এজন্য বই পড়ার ব্যাপারে কোনো বয়সের প্রয়োজন হয় না। মানুষকে মানুষ করে তুলতে বইয়ের বিকল্প দ্বিতীয়টি নেই। তাই সরকারি উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া সমাজের ছাত্র -ছাত্রী, যুব সম্প্রদায়, শিক্ষক -শিক্ষিকা, সাধারণ মানুষ যাতে বইমেলায় আসেন, বই কেনেন এ ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করে তুলতে হবে। প্রাত্যাহিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে পারে এই বই। তাই নিয়মিত কয়েক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে সবাইকে বই পড়তে হবে। ঘন ঘন বইমেলার আয়োজন হলে মানুষ বই কেনার সুযোগ পাবে। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর সভ্যতায় স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্র -ছাত্রীরা বই পড়ে মানুষ হয়। সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা অর্জন বই পাঠ ছাড়া সম্ভব নয়। যে সমাজ ও পরিবারে বই পড়ার সুযোগ নেই তারা অন্ধকার জগতে বাস করছে। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তারা মুক্ত হতে পারেনি। গ্রামের নারীরা আজও শিক্ষায় পিছিয়ে, তাদেরকে শিক্ষায় আলোকিত করতে সরকারি উদ্যোগে এদের হাতে বই তুলে দেওয়া উচিত। গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় যুব সম্প্রদায় সাধারণ মানুষ বই পড়ার অভ্যেস থেকে বঞ্চিত। মুঠোফোনকে বিশ্বস্ত সঙ্গী ভেবে অনেকে গেম খেলে সময় অপচয় করে – প্রতিভা, মনুষ্যত্ব, মানবিক, শিক্ষা ইত্যাদি তলানিতে নিয়ে যায়। অনেকে বিপথগামী হচ্ছে। বিভিন্ন ক্লাবে লাইব্রেরি গড়ে তুলে যুবসম্প্রদায়কে বই পড়ার সুযোগ করে দিলে তারা উপকৃত হবে। মানসিক চাপ কমাতে ও ভুল শোধরাতে বই বিশ্বস্ত সঙ্গী, এর বিকল্প নেই। বিভিন্ন সাহিত্যিকের সাহিত্য মানুষকে সমৃদ্ধ করে, ধর্মনিরপেক্ষ করে, মানবিক করে, দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করে সাহিত্য, কবিতা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্য্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবি ও সাহিত্যিকের লেখা পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। তাঁরা তাঁদের লেখনির মাধ্যমে মানুষকে সঠিকভাবে পথ চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বইমেলায় এই মনীষীবৃন্দের বই সমাজ ও দেশকে সুসমৃদ্ধ করবে। হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা, ভেদাভেদ ও বৈষম্য দূর করতে সাহিত্যিকদের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রজন্ম, বর্তমান দিনকাল নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইল টিপাটিপি করে সময় পার করছে। বই পড়লে অনেক লাভ তা বোঝে না কিন্তু অতীতকে না জানলে সম্যক জ্ঞানলাভ সম্ভব নয়। অবসাদগ্রস্ত মানুষ বই পড়ে মানসিক ভারসাম্য ফিরে পায়। দাস প্রথার মতো জঘন্যতম বিষয় বই না পড়লে মানুষ জানতো না। যুবসমাজের মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, বই মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী বা বন্ধু হতে পারে – তাই নিয়মিত বই পড়ুন। বই হোক আপনার, আমার, সবার বন্ধু। বইয়ের সঙ্গে মিতালি করলে সে আপনার সর্বনাশ করবে না। আপনার প্রতিভা বিকশিত করবে – আপনাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে এই বই।
লেখক : প্রাবন্ধিক; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
Leave a Reply