1. admin@pathagarbarta.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

প্রসঙ্গ : স্মারক সংকলন ‘মুক্তাক্ষর’-এর মূল্যায়ন

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : রবিবার, ৫ জুন, ২০২২
  • ২১৭ বার পঠিত

প্রসঙ্গ : স্মারক সংকলন ‘মুক্তাক্ষর’-এর মূল্যায়ন
পারভেজ চৌধুরী

এই করোনা মহামারী কালেও থেমে নেই সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম। সৃষ্টিশীল উদ্যমী তরুণ রত্নদীপ দাস রাজু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশ করেছেন স্মারক সংকলন ‘মুক্তাক্ষর’। রাজু নবীগঞ্জ উপজেলার খ্যাতিমান শিক্ষক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস এর সন্তান। তিনি নবীগঞ্জ মুক্তাহার গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধ শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার’ এবং এই স্বপ্নবাজ তরুণ উক্ত পাঠাগারের ব্যবস্থাপনায় সামাজিক নানা গঠনমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। রাজু বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদের সঙ্গে জড়িত। তিনি এই জাতীয় সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং গ্রন্থাগার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক-সংকলন ‘মুক্তাক্ষর’ এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, এই করোনা অতিমারী সময়ে রত্নদীপ দাস রাজু স্মারকটি অতি যত্ন সহকারে সম্পাদনা করেছেন। স্মারকের লেখা গুলো অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

শুরুতেই সম্পাদক লিখেছেন ‘রবীন্দ্র গ্রন্থাগারে পড়ি বই/জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হই।’ সংকলনের শুরুতেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘লাইব্রেরী’ প্রবন্ধটি সন্নিবেশিত হয়েছে, যা সংকলনের ভাব গাম্ভীর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি সম্পাদকের মেধাবী চিন্তার স্বাক্ষর বহন করে। রত্নদীপ দাস রাজু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র এবং অন্তরঙ্গ প্রিয়পাত্র গুরুপ্রসন্ন দাসগুপ্ত মধু বাবুকে নিয়ে লিখেছেন ‘বই প্রেমিক মধু বাবু’। প্রবন্ধটিতে নবীগঞ্জ উপজেলার গুজাখাইড় গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জমিদার সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের ছয় সন্তানের শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার ইতিবৃত্ত চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান শিক্ষাবিদ প্রয়াত অধ্যাপক হাবিবুর রহমান সম্মর্কে স্মৃতিচারণ মূলক একটি আবেগঘন ও মূল্যায়ন ধর্মী নিবন্ধ লিখেছেন তারই সুযোগ্য সন্তান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম-সচিব জনাব এনামুল হাবিব। তিনি লিখেছেন- “অধ্যাপক হাবিবুর রহমান আপাদমস্তক প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, মুক্তবুদ্ধির একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকার, অসাম্প্রদায়িক ও সমাজের প্রতি চরমভাবে দায়বদ্ধ একজন মানুষ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডীন, উপ উপাচার্য এবং অত্যন্ত সুনামের সাথে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। অবসর জীবনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সিলেট মেট্রোপলিটন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক কৃতি গবেষক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য লিখেছেন- ‘বাংলা সনের জনক প্রসঙ্গে।’ অত্যন্ত মূল্যবান গবেষণাধর্মী লেখাটি বাংলা সনের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে। প্রবন্ধটি আগামী দিনে গবেষকদের গবেষণার কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। রম্য লেখক গবেষক ও প্রাবন্ধিক বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এ আই জি পিপি এম জনাব মালিক খুসরু লিখেছেন- ‘এক দিনেতে হইনি আমি তোমাদের এই বঙ্গবন্ধ’। প্রবন্ধটিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সীমাহীন সংগ্রাম আর মহান ত্যাগের ইতিহাস বিধৃত হয়েছে প্রবন্ধের শরীর জুড়ে। সুলেখক জনাব মালিক খসরুর প্রাজ্ঞল শব্দচয়ন প্রবন্ধটিকে অমিয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। সুলেখক জনাব মালিক খসরু ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ সাবডিভিশনের সর্বশেষ এস ডি পিও হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জের সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন অন্তরঙ্গ প্রিয়পাত্র ছিলেন।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সুলেখক, কবি, গবেষক, সিলেট ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ লিখেছেন ‘একাত্তর : বাউশা ইউনিয়ন বীরযোদ্ধা এবং গুজাখাইড় প্রতিরোধের অজানা তথ্য’। প্রবন্ধটিতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অলিখিত একটি অধ্যায় সন্নিবেশিত হয়েছে।যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি মূল্যবান সংযোজন। প্রবন্ধটি নাতিদীর্ঘ হলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। প্রবন্ধটি কয়েকটি পর্বে বিন্যস্ত। বাউশা ইউনিয়ন বীরযোদ্ধা, গুজাখাইড় প্রতিরোধ : একজন শ্যামাপ্রসন্ন দাসগুপ্ত, জয়বাংলা পত্রিকাঃ যুদ্ধকালে পাওয়া সোনার মোহর, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিপাঠ ও গ্রন্হ ভূবন। প্রবন্ধটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান অনন্য দলিল।

বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদের সভাপতি মোঃ ইমাম হোসেন সাহেবের লেখা ‘জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে পাঠাগারের গুরুত্ব’ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা মূলক প্রবন্ধ। বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব আশরাফুল আলম সিদ্দিকী লিখেছেন- ‘মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশে শতবর্ষী গ্রন্থাগার এবং প্রাইজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরী’। এটিও একটি চমৎকার প্রবন্ধ। পারভেজ চৌধুরীর ‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের দর্শন সংকট’ প্রবন্ধে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতিমালার দুঃখ জনক পরিনণতি প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসন, ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীদের উত্থান, সাম্প্রদায়িকতা,মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার উপর বার বার আঘাত হেনেছে। যা ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মোটেই কাম্য ছিলো না।এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। এ এক অচেনা বাংলাদেশ। তবে আশার কথা হলো সব বাধা উপেক্ষা করে ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ। আমরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। ‘সাবাশ বাংলাদেশ পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়।জ্বলে পুড়ে মরে ছার খার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত লিখেছেন এর প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাসের সুযোগ্য সন্তান সম্ভাবনাময় তরুণ লেখক রত্নদীপ দাস রাজু। রাজু বর্তমানে ছাত্র, এখনো কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন নি। এমতাবস্থায় প্রয়াত পিতার স্মৃতিকে অম্লান রাখার প্রয়াসে নিভৃত মুক্তাহার গ্রামে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা কম কথা নয়। কেবল মাত্র লক্ষ্যে অটল এবং মনের জোর থাকলে এমন দুরূহ কাজ করা সম্ভব। রাজু সেই অসাধ্য সাধন করে প্রমাণ করেছেন উদ্দেশ্য সৎ থাকলে যে কোন অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। আমাদের সমাজে যেখানে কোন কোন প্রতিষ্ঠিত সন্তান তাদের জন্মদাতা পিতাকে অথবা জন্মদাত্রী জননীকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে যায় সেখানে ছাত্র অবস্থায় রাজু পিতার স্মৃতিতে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজুকে অভিনন্দন ও সশ্রদ্ধ সালাম। রাজু আমাদের সমাজের তরুণদের আদর্শ এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তার আগামী দিনের পথচলা মঙ্গলময় হোক। আরো যারা লিখে সংকলনটি সমৃদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে দ্বীপ দাস, নিউটন দাস (রুবেল), কনিক দাস শুভ। সকল লেখককে শ্রদ্ধা এবং হৃদয়জ অভিনন্দন। পৃথ্বীশ চক্রবর্তী ও কুমারেশ বিশ্বাসের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বঙ্গ, ভারতের কবি শঙ্খ শুভ্র পাত্র ‘প্রিয় মুজিব বর্ষ’ শিরোনামে একটি চমৎকার কবিতা উপহার দিয়ে আমাদেরকে চির কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করলেন। কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন। সংকলনের শেষ পৃষ্ঠায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাসের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। যা গ্রন্থের প্রথম ভাগে গ্রন্থিত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাসের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!