বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী সম্প্রদায়ের বসবাস হানজা উপত্যকায়
লিয়াকত হোসেন খোকন
পৃথিবীর একটি সম্প্রদায় বা উপজাতি নাম হল হানজা সম্প্রদায়। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে দীর্ঘায়ু হল এই জাতি। বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হল এরাই। হানজা উপত্যকায় বাস করে বলে হানজা সম্প্রদায় নামে তারা পরিচিত। কারাকোরাম পর্বতমালার কাছে হানজা উপত্যকার অবস্থান। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই উপত্যকা। এই উপত্যকায় বসবাসরত মানুষদেরই হানজা সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই মহাবিশ্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। একেক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ভালো কিম্বা খারাপ জিনিসের জন্য পরিচিত হয়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে হানজা সম্প্রদায় ও তাদের নিজস্ব গুণের জন্যই পরিচিত। তবে তা অবশ্যই খারাপ নয়, হানজা সম্প্রদায় পরিচিত এখানকার মানুষের দীর্ঘায়ুর জন্য।
অন্যান্য দেশে যেই জায়গায় নারীদের গড় আয়ু ৬০ বছর, সেখানে হানজা সম্প্রদায়ের নারীদের গড় আয়ু ১৬০ বছরেরও বেশি। এখানে ৬৫ বছর বয়সী নারীদের দেখলে মনে হয় যেন ২৫ বছরের তরুণী বা যুবতী। হানজা সম্প্রদায়ের নারীরা সত্তর বছর বয়সেও সন্তান জন্মদানে সক্ষম থাকে। সেখানে গেলে দেখা যায়, ৭০ কি ৭৫ বছর বয়সী পুরুষ নারী সদ্য জন্ম দেয়া নবজাতক সন্তানের বাবা -মা হয়েছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। এই সম্প্রদায় পৃথিবীর একমাত্র সম্প্রদায় যেখানে মানুষ গড়ে ১০০ বছরেরও বেশি বাঁচে। শরীর, চেহারা, কাজ কোথাও তাদের বয়সের ছাপ থাকে না। এছাড়াও হানজা সম্প্রদায়ের নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে পরিচিত। এক কথায় এখানকার নারীরা চির যুবতী বা চিরযৌবনা। তাদের দীর্ঘায়ু ও চিরযৌবনা হওয়ার পিছনের রহস্য জানার প্রতি কমবেশি সকলেরই আগ্রহ রয়েছে এবং তার কারণে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, তারা ধরাবাঁধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দিনে দুই বেলা খায় এবং কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে। তারা সব ধরনের ফলের শরবত পান করেন। এসব শরবতে ফলের রস বেশি থাকে। এছাড়াও হানজা সম্প্রদায়ের ৯৯ শতাংশ মানুষই ভেজিটেরিয়ান। তাদের খাদ্যদ্রব্যগুলো বেশির ভাগই তৈরি পনির, দুধ, বাদাম এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য দিয়ে। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাতরাশ এবং সূর্য ডুপলে রাতের খাবার সারেন। এর মাঝে নাকি তারা আর কোনো খাবার খায় না। হানজা উপজাতির জীবনে দুঃখ, অবসাদ, চিন্তার কোনো জায়গা নেই। নারী -পুরুষ উভয়েই পরিশ্রম করেন। হানজা নারীদের ঠোঁটের কোণে সর্বদা হাসি লেগেই থাকে।
হানজা উপজাতি বা সম্প্রদায়কে আলেকজান্ডারের বংশধারার একটা অংশ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে স্থানীয় ব্রুশো বা হানজা সম্প্রদায়ের দাবি, আলেকজান্ডার তাঁর ম্যাসিডোনিয়ান সৈন্য নিয়ে এখানে এসেছিলেন। অনেক সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে এখানে রেখে দেয়া হয়। নিরোগ হানজাদের পিছনে অ্যাপ্রিকটস ফলের রস নিয়মিত খাওয়ার কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যান্সার -টিউমার ফ্রি সম্প্রদায় বলা হয় এদের। অ্যাপ্রিকটস ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিগডালিন বা ভিটামিন বি -১৭ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। নিরোগ হানজাদের পিছনে অ্যাপ্রিকটস ফলের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হানজা সম্প্রদায় নিয়মিত অ্যাপ্রিকট ফলের জুস খায় - এই রীতি তাদের বহু প্রাচীন। তাদের ত্বক উজ্জ্বল থাকার কারণ হল হিমবাহের জলে স্নান এবং পানীয় জল হিসাবে এই জলের ব্যবহার। তাছাড়া ত্বক উজ্জ্বল হওয়ার আরও একটি কারণ হল, হিমবাহের গরম জলের সঙ্গে তুমরু নামে একপ্রকার পাতা মিশিয়ে প্রতিদিন হার্বাল টি পান করেন এরা। শিশুকাল থেকেই হানজা সম্প্রদায়ের মেয়েদের সৌন্দর্য বিকশিত হতে শুরু করে। তাদেরও অবিশ্বাস্য সুন্দরী হওয়ার পিছনের আরেকটি রহস্য হচ্ছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম করা। তারা প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে তিন ঘন্টা যোগব্যায়াম করবেই। নিয়মিত শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম করে যা তাদের চর্ম এবং শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে। এই জন্যই বয়স বৃদ্ধি পেলে তাদের শরীর সহজে দুর্বল হয় না। এই সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি, যা যেকোনো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক বেশি। হানজা সম্প্রদায় শিক্ষা, আচার -ব্যবহার কিম্বা সংস্কৃতি ইত্যাদির দিক দিয়ে যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক উন্নত।
লেখক : প্রাবন্ধিক ; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : রত্নদীপ দাস (রাজু)
মোবাইল : +৮৮০১৭৩৭-৯১২৪৯৬
ইমেইল : pathagarbarta@gmail.com
info@pathagarbarta.com
Copyright © 2024 পাঠাগার বার্তা. All rights reserved.