1. admin@pathagarbarta.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

বাংলা গানের অমর কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ৫৩৬ বার পঠিত

লিয়াকত হোসেন খোকন

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখেছিলেন – ‘হয়ত কিছুই নাহি পাব, তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাব।’ আর এই গানে কণ্ঠ দিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কিংবদন্তি হয়ে রইলেন। তিনি এ পর্যন্ত ১০ হাজার গান গেয়েছেন, সব গানই তাঁকে খ্যাতি দিয়েছে।

সেই কবে ১৯৫৪ সালে অনুপম ঘটকের সুরে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে সন্ধ্যা গেয়েছেন – ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। এ গান শুনলে বৃদ্ধরাও যৌবনে চলে যেতে যান। তাঁর নামটি যেন হৃদয়ে ঝংকার তোলে। নামটির এমন মহিমা যে উচ্চারিত হলেই শ্রোতাদের মনের আকাশে এক লহমায় গানের ইন্দ্রধনু ফুটে ওঠে। যে-কোনো লগ্নই হয়ে ওঠে গান শোনার। তাঁর নাম শুনতেই কানের ভেতর নাকি মনে কিংবা মাথার ভেতর ভাঙতে থাকে গানের ঢেউ। তাঁর গাওয়া – ‘মায়াবতী মেঘে আনে তন্দ্রা’, ‘উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা’, ‘মধুমালতী ডাকে আয়’, ‘বকম বকম পায়রা’, ‘এ গানে প্রজাপতি’, ‘নতুন সূর্য আলো দাও’, ‘ওগো মোর গীতিময়’, ‘চন্দন পালঙ্কে শুয়ে’, ‘মধুর বংশী’, ‘কুহু কুহু কোয়েল’, ‘নেব না সোনার চাঁপা’, ‘সজনি ও সজনি’, ‘আমি প্রিয়া তুমি প্রিয়’, ‘ও ঝরাপাতা এমনি তুমি’, ‘হাতে কোনো কাজ নেই’, ‘যেখানে স্বপ্ন সুরে রইবে ভরে’, ‘না হয় রহিতে কাছে’, ‘বাঁশি বুঝি আর নাম জানে না’, ‘বঁধুয়া এলো না’, ‘চিনেছি তোমায় অচেনার মাঝে’, ‘তোমারে হারানো তো নয়’, ‘চৈতী ফুলের কী বাঁধিস রাঙা রাখি’, ‘পিয়া পিয়া পিয়া যে ডাকে আমায়’ – এমনি অসংখ্য গান সংগীতশ্রোতাদের মনে ছড়িয়ে দেয় স্মৃতিমেদুরতার কুয়াশা।

বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে আছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বয়স এখন প্রায় ৯১ বছর। এ বয়সে তার দুঃখ আছে। থাকবেই না কেন, তার গাওয়া হিট গান এ প্রজন্মের শিল্পীরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গেয়ে বেশ নামধাম কামাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “কিছু টিভি চ্যানেল ও গান ব্যবসায়ী এজন্য মুনাফা লুটছে। একদিন যে শিল্পীর নিতান্ত দুরবস্থায় কেটেছে শেষ জীবন, তার গান গেয়েই আজকের শিল্পীদের কত নামডাক। ভীষণ রকমের অবিচার এসব। নতুন শ্রোতারা আসল শিল্পীর কৃতিত্ব জানতেই পারছে না। আমার গাওয়া কত না গান এ প্রজন্মের শিল্পীরা টিভি চ্যানেলে করেন অথচ আমার নামটি তারা একটি বারের জন্যও স্মরণ করেন না। কতই না অকৃতজ্ঞ এ প্রজন্মের শিল্পী ও টিভি চ্যানেলগুলোর প্রযোজকরা!”

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এ বয়সে আরও মনে করেন, আগের দিনে শিল্পবোধ, নীতি বিসর্জন দিয়ে গানবাজনা নিয়ে পুরোপুরি ব্যবসা ছিল না। আজকাল শুনি, কেউ সিডিতে গান শুনে গান গেয়ে দেয়। ভাবতে অবাক লাগে, এটা কি সম্ভব। একজন শিল্পী তাঁর জীবনভর শিক্ষায়-সাধনায়-নিষ্ঠায় একটা স্টাইল তৈরি করেন। যেমন – হেমন্ত বাবুর স্টাইল, মান্না বাবুর স্টাইল, মানবেন্দ্র বাবুর স্টাইল অনেক মূল্য দিয়ে তাঁদের অর্জন করা।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর।
১৯৪৪ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সংগীতজগতে আসেন। তাঁর প্রথম রেকর্ডকৃত গান – ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ এবং ‘তোমার আকাশে ঝিলিমিলি করে’। মাত্র ১২ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৪২ সালে তিনি রেডিয়োতে গান গাওয়া শুরু করেন। গানটি ছিল ‘যদি বা ফুরালো গান’। সিনেমায় প্রথম গান করেন ১৯৪৮ সালে ‘অঞ্জনগড়’ ছবিতে। সেই রাইচাঁদ বড়ালের যুগ থেকে এ যুগের সুমনের সুরে গানও করেছেন তিনি।

অতীতের সঙ্গে আজকের তুলনাও করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, “সে-সব দিনে শিল্পীরা নিজেদের উজাড় করে দিতেন, আজও রয়ে গেছে সে-সব গান। আজকের সবই তো রেডিমেড – গানের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না শিল্পীরা। দু-দিনেই লোকে ভুলে যাচ্ছে এসব গান। এসব দেখলে বড়ো কষ্ট হয়। অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়ের মতো মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করা মানে প্রতিদিনই খানিকটা শেখা। আজকের শিল্পীরা সে সুযোগই পান না। এ নিয়ে আজকের শিল্পীরা আমার কাছেই আফসোস করেন।”

একসময় মুম্বাইয়ের শিল্পীদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছিলেন। এ বয়সে সে-সব স্মৃতি এখনো সন্ধ্যার মনে নাড়া দেয়। মুম্বাইতে শচীন দেব বর্মণই তাঁকে ডেকে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অনিল বিশ্বাসের সুরে লতার সঙ্গে গান করেছিলেন। সেই সূত্রে লতার সঙ্গে তাঁর খুব ভাব হয়। গীতা দত্তের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়েছিল।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় বাংলা গানের একটা পুরো অধ্যায়। বাংলা সিনেমার প্রথম ‘প্রিমা ডোনা’ কানন দেবীর হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন এই সন্ধ্যা। পরবর্তী চার দশক (১৯৪৮ থেকে ১৯৮৮) সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা ছবির প্লেব্যাক-সম্রাজ্ঞীর আসনে। পাশাপাশি আধুনিক বাংলা গানের ক্ষেত্রে ৬০ বছর ধরে সোনালি ফসল তুলে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন তিনি। তিনি যা অর্জন করেছেন তা মহিরুহের মতোই। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানেই হেমন্ত-সন্ধ্যা, অনুপম-সন্ধ্যা, রবীন-সন্ধ্যা, মানবেন্দ্র-সন্ধ্যা, মান্না-সন্ধ্যা, শ্যামল মিত্র-সন্ধ্যা, সুচিত্রা-সন্ধ্যা – এমন বহু উজ্জ্বল অধ্যায় ভরে রেখেছে তাঁর শিল্পজীবনে। এভাবেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় লিজেন্ড হয়ে আছেন, যা সংগীতপ্রেমিকদের অহংকারী হওয়ার রসদ জোগায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো – আকাশের অস্তরাগে আমারই স্বপ্ন জাগে ; আজ কেন ও চোখে লাজ কেন মিলনসাজ যেন বিফলে যায় ; আমি তোমারে ভালোবেসেছি ; আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি ; আর ডেকো না সেই মধুনামে যাবার লগনে ; উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা ; এ গানে প্রজাপতি পাখায় পাখায় রং ছড়ায় ; এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার ; ওগো মোর গীতিময় ; কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি কী মিষ্টি এ সকাল ; কে তুমি আমারে ডাকো অলখে লুকায়ে থাকো ; চৈতি ফুলের কি বাঁধিস রাঙারাখি ; গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু কার স্বপ্ন ছড়াতে চায় ; গুন গুন মন ভ্রমরা কোথা যাস কীসেরই ত্বরা ; ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাত ; জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া ; ঠুন ঠুন ঠুন কাঁকনে যে কী সুর বাজে রে, বাজে রে, বাজে রে ; তারা ঝিলমিল স্বপ্ন মিছিল ; তুমি তো জানো না কত ব্যথা ভুলে থাকি ; থই থই শাওন এল ওই ; পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম কথা রাখো মোর ; পিয়া পিয়া পিয়া কে ডাকে আমারে ; প্রজাপতি মন আমার পাখায় পাখায় রং ছড়ায় ; মধুমালতী ডাকে আয় ফুল ফাগুনের এ খেলায় ; মধুর মধুর বংশী বাজে ; মরমী গো, আজি মনের কথাটি বলো না ; মায়াবতী মেঘ এল তন্দ্রা ; যদি নাম ধরে তারে ডাকি ; যারে যা যা ফিরে যা যা ; হয়তো কিছুই নাহি পাব – ইত্যাদি – ইত্যাদি।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ঃ
১.
ওগো মোর গীতিময়,
মনে নাই, সে কি মনে নাই,
সেই সাগরবেলায় ঝিনুক খোঁজার ছলে
গান গেয়ে পরিচয়।
আমি দিনু পূজা প্রথম প্রণয়-ফুলে,
ঝিনুকের মালা খোঁপা হতে দিনু খুলে।
তুমি কপোল চুমিয়ে বলেছিলে প্রিয়,
প্রেমের হবে গো জয়।
গানের বিহগী সমবেদনায়
ব্যথার অশ্রু নিয়া
দিকে দিকে ফেরে তোমারে খুঁজিয়া –
তুমি কোথায়, তুমি কোথায়!
বিদায়ের ক্ষণে কাঁদিয়া শুধানু যবে –
দূরে গেলে হায় আমারে কি মনে রবে,
তুমি বলেছিলে এই আঁখির আড়াল
মনের আড়াল নয়।
বাণী : কমল ঘোষ, এমএ। সুর : রবীন চট্টোপাধ্যায়।
কলম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি।
২.
আমি প্রিয়া তুমি প্রিয় ,
জীবন-বেলার এই পরিচয়
এক জনমের নয়, সে তো নয়- জানিয়ো।
কত বসন্তে কত না গোধূলি বেলা
তুমি বাঁশরিয়া আমি বেণু হয়ে
খেলেছি অধর খেলা।
কত হেমন্তে রব জোছনায়
ফুল হয়ে ফুটেছিনু মমতায় জানিয়ো ।
তুমি যবে মায়াতীর
আমি পলাতকা ঢেউ হয়ে
বক্ষে ঝাঁপায়ে পড়েছিনু কত
মিলন তিয়াস লয়ে।
তুমি ছায়াতরু আমি বল্লরী প্রিয়া,
দুহু এক হয়ে ছিনু কতকাল
এক মন, এক হিয়া।
প্রেম দিয়ে কত বাসর রচিনু কত
খেলা ঘর ভাঙিয়া গড়িনু জানিও।
কথা ঃ শ্রী কমল ঘোষ। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
৩.
মধুর মধুর বংশী বাজে কোথা কোন কদমতলিতে,
আমি পথের মাঝে পথ হারালেম ব্রজে চলিতে –
কোন মহাজন পারে বলিতে।
পোড়া মন ভুল করিলি চোখ তুলিলি
পথের ধুলা থেকে,
রাই যে আমার রাঙা পায়ের ছাপ দিয়েছে এঁকে –
ঢুকলি ছেড়ে পথের ধুলো চন্দ্রাবলীর কুঞ্জগুলিতে।
অনেক আলোর ঘটা অনেক ছটা ঝলোমলো,
আমার হাটের মাটির পিদিপ লাজে নিভাইল –
এখন যে হায় গভীর আঁধার
কোন পথে ঘাট বল ও ললিতে।
কথা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর – সুধীন দাশগুপ্ত।
৪.
যেখানে স্বপ্ন সুরে রইবে ভরে
তোমার আমার মন,
সেখানে তোমায় আমি গান শোনাব
রইল নিমন্ত্রণ।
যেখানে আকাশ নীলে নীল
আর তোমার বাঁশির সুরে
আমার হাসির মিল
যেখানে ফুলে ফুলে সারাবেলা
অলির গুঞ্জরণ,
সেখানে তোমায় আমি গান শোনাব
রইল নিমন্ত্রণ।
আমার মুগ্ধ চোখের নীরব আকুলতায়,
আমার প্রাণের কথা খুঁজে পাবে
সেই গানের কথায়।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া আরও উল্লেখযোগ্য গান হলো ঃ
১.
আকাশের অস্তরাগে আমারই স্বপ্ন জাগে,
তাই কি হৃদয়ে দোলা লাগে?
আজ কান পেতে শুনেছি আমি
মাধবীর কানে কানে কহিছে ভ্রমর, ‘ আমি তোমারই ‘।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবি ঃ সূর্যমুখী।
২.
আজ কেন ও চোখে লাজ কেন মিলনসাজ যেন বিফলে যায়,
মন যেন ফুলের বন যেন আঁখির কোণ যেন তোমারে চায়।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ নচিকেতা ঘোষ।
৩.
আমি তোমারে ভালোবেসেছি,
চিরসাথী হয়ে এসেছি।
এ লগন পূর্ণ যে তোমাতে।
কথা ঃ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর ঃ রাজেন সরকার।
ছবি ঃ নতুন জীবন।
৪.
আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি
মোর নিশীথ বাসর শয্যায়,
মন বলে ভালোবেসেছি,
আঁখি বলিতে পারেনি লজ্জায়।
জানি না এ কোন লীলাতে
মন চায় মাধুরী বিলাতে।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়। ছবি ঃ বিপাশা।
৫.
আর ডেকো না সেই মধুনামে যাবার লগনে –
কিশোর বেলায় যে নামে ডাকিতে কেন রাখো মনে।
তোমারই আঘাতে ঝরেছে যে মালা
ভুলতে দিও গো মোরে তারই স্মৃতিজ্বালা।
কথা ঃ প্রণব রায়। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
৬.
উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা
সূর্যের উজ্জ্বল রৌদ্রে, চঞ্চল পাখনায় উড়ছে।
নিঃসীম ঘন নীল অম্বর
গ্রহতারা থাকে যদি থাক নীল শূন্যে
হে কাল, হে গম্ভীর, অশান্ত সৃষ্টির প্রশান্ত মন্থর অবকাশ,
হে অসীম, উদাসীন বারোমাস।
কথা ঃ বিমলচন্দ্র ঘোষ। সুর ঃ সলিল চৌধুরী।
৭.
এ গানে প্রজাপতি পাখায় পাখায় রং ছড়ায়,
এ গানে রামধনু তার সাতটি রঙের দোল ঝরায়।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ শ্যামল মিত্র।
ছবি ঃ দেয়া নেয়া।
৮.
কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি কী মিষ্টি এ সকাল –
সোনা ঝরছে ঝরে পড়ছে কী মিষ্টি এ সকাল।
নীল পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়
আলোর আভায় লাল হয়েছে –
কী মিষ্টি এ সকাল।
কথা ঃ মোহিনী চৌধুরী। সুর ঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
ছবি ঃ নায়িকা সংবাদ।
৯.
এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার,
এ তিথি শুধু গো যেন দখিন হাওয়ার।
এ লগন দুটি পাখি মুখোমুখি নীড়ে জেগে রয়,
কানে কানে রূপকথা কয় –
এ তিথি শপথ আনে হৃদয় চাওয়ার।
এ লগনে তুমি আমি একই সুরে মিশে যেতে চাই,
প্রাণে প্রাণে সুর খুঁজে পাই –
এ তিথি শুধু গো যেন তোমায় পাওয়ার।।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়। ছবি ঃ পথে হল দেরি।
১০.
গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু কার স্বপ্ন ছড়াতে চায়,
হৃদয় ভরাতে চায়।
মিতা মোর কাকলি কুহু সুর শুধু যে ঝরাতে চায়,
আবেশে ছড়াতে চায়, প্রাণে মোর।
মৌমাছিদের গীতালি পাখায় বাজায় মিতালি
মীড় দোলানো সুরে আমার কন্ঠে মালা পরাতে চায়।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ অনুপম ঘটক।
ছবি ঃ অগ্নিপরীক্ষা।
১১.
কে তুমি আমারে ডাকো অলখে লুকায়ে থাকো –
ফিরে ফিরে চাই, দেখিতে না পাই।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ অনুপম ঘটক।
ছবি ঃ অগ্নিপরীক্ষা।
১২.
চৈতি ফুলের কি বাঁধিস রাঙারাখি?
প্রেম ডোরে মোর হৃদয় পড়েছে বাঁধা
পড়েছে আঁখির ফাঁদে আঁখি।
কথা ঃ কমল ঘোষ। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
১৩.
গুন গুন মন ভ্রমরা কোথা যাস কীসেরই ত্বরা
কেন আর মিছে এ ফুল সে ফুল করা?
আকাশে রং ধরেছে নদী দুই কুলে ভরেছে
এসেছে দারুণ ফাগুন আগুন ভরা।
কথা ও সুর ঃ সলিল চৌধুরী।
১৪.
ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকঝিকি তারা এই মাধবী রাত
আসেনি তো বুঝি আর জীবনে আমার –
এই চাঁদের তিথিরে বরণ করি।
ওগো মায়াভরা চাঁদ আর ওগো মায়াবিনী রাত।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়। ছবি ঃ সবার উপরে।
১৫.
জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া,
ছল ছল আঁখি মোর জলভরা মেঘে যেন ছাওয়া।
পদধ্বনি শুনি তার আমি বারে বারে
ছুটে যাই দ্বারে –
ভুল ভেঙে যায়।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়। ছবি ঃ সবার উপরে।
১৬.
ঠুন ঠুন ঠুন কাঁকনে যে কী সুর বাজে রে, বাজে রে, বাজে রে –
মনের ময়ূরী মেলে দিল পাখা লাজে রে, বাজে রে, বাজে রে।
ফুলে ফুলে জাগে রঙের হাসি,
ভ্রমর কী সুরে বাজাল বাঁশি।
কথা ও সুর ঃ সুধীন দাশগুপ্ত।
ছবি ঃ অন্তরাল।
১৭.
তারা ঝিলিমিল স্বপ্ন মিছিল –
ঘুমে ঢুলু ঢুলু ঢুলু চম্পক ছায়ে
অলি জাগাল কি রে।
কথা ঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর ঃ নচিকেতা ঘোষ।
১৮.
তুমি তো জানো না কত ব্যথা ভুলে থাকি,
তুমি তো মানো না পূজা মোর আজও বাকি।
মরুতে হারায় নদী, কত তারা ঝরে।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ সন্তোষ মুখোপাধ্যায়।
১৯.
থই থই শাওন এল ওই –
পথহারা বৈরাগী রে তোর একতারাটা কই।
ফুলভরা কোন ভুল আঙিনায়
হায় রে ও বাউল।
কথা ঃ যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। সুর ঃ সুধীন দাশগুপ্ত।
২০.
পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম কথা রাখো মোর –
এমন করে তুমি আঁচল ধোরো না শ্যাম,
এখনি যে শেষরাত হয়ে যাবে ভোর।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ সন্তোষ মুখোপাধ্যায়।
২১.
পিয়া পিয়া পিয়া কে ডাকে আমারে
মায়াময় এই মধু সন্ধ্যায় –
যেন আবেগ জাগানো চোখে ছুঁয়ে যায়
তনুমন মোর ভীরু ভাবনায়।
কথা ঃ কমলাপ্রসাদ ঘোষ। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
২২.
প্রজাপতি মন আমার পাখায় পাখায় রং ছড়ায়,
কে জানে কোন চঞ্চলতায় তোমার ফুলের মন ভরায়।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ নচিকেতা ঘোষ।
২৩.
মধুমালতী ডাকে আয় ফুল ফাগুনের এ খেলায়,
যুথী কামিনী কত কথা গোপনে বলে মলয়ায়।
চাঁপা বনে অলি সনে আজ লুকোচুরি,
আলো ভরা কালো চোখে কী মাধুরী –
মন চাহে যে দিতে তবু সে লাজে সরে যায়।
মালা হয়ে প্রাণে মম কে জড়াল,
ফুলরেণু মধুবায়ে কে ঝরাল –
জানি জানি কে মোর হিয়া রাঙালো রাঙা কামনায়।
কথা ঃ প্রণব রায়। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
২৪.
মরমী গো, আজি মনের কথাটি বলো না,
এ স্মৃতি ভুলো না, এ মালা খুলো না
এ গীতি ভুলো না।
কথা ঃ প্রণব রায়। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়।
২৫.
মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা –
তুলতুল রাঙা পায়েতে ফুল ফুল বনছায়েতে
পলাশের রঙ রাঙালে কখন
চোখে সে স্বপন আঁকে।
কথা ঃ শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সুর ঃ নচিকেতা ঘোষ।
২৬.
যদি নাম ধরে তারে ডাকি
কেন সবুজ পাতারা যে সাড়া দেয়,
বনে বনে নব মঞ্জরী কেন ফুলে ফুলে ভরে যায়।
কথা ও সুর ঃ সলিল চৌধুরী।
২৭.
যারে যা যা ফিরে যা যা –
জীবন তরণীতে হবে দূরে পাড়ি দিতে
ভাঙা হালে টলোমলো ছেঁড়া পালে হায়।
কথা ও সুর ঃ সলিল চৌধুরী।
২৮.
হয়তো কিছুই নাহি পাব
তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাব।
যদি ওগো কাঁদে মোর ভীরু ভালোবাসা
জানি তুমি বুঝিবে না কভু তারই ভাষা –
তোমারই জীবনে কাঁটা আমি কেন মিছে ভাব।
ধূপ চিরদিন নীরবে জ্বলে যায়
প্রতিদান সে কি পায়?
ক্ষতি নাই অনাদরে যদি কভু কাঁদি,
আলো ভেবে যদি ছায়া বুকে বাঁধি –
তোমারই আশাতে তবু ওগো কিছু নাহি চাব।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ শ্যামল মিত্র।
২৯.
এই গান গাওয়া মোর
নয় গো অকারণে
জানি স্বপ্ন আমার সফল হবে
এই যে শুভক্ষণে।
কথা ঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর ঃ রবীন চট্টোপাধ্যায়। ছবি ঃ যাত্রা হলো শুরু।
৩০.
পিয়া বিনা নাহি নিদ আঁখি পাতে
পথ চেয়ে জাগি আজি মধু রাতে।
মিলনের ফুল মালা
বিরহে যে হল জ্বালা,
গুমরিয়া হিয়া মম কাঁদে বেদনাতে।
কথা ঃ শ্যামল গুপ্ত। সুর ঃ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ।
ছবি ঃ আঁধারে আলো।
৩১.
আমার জীবনে আজ
এ কি অজানা ছোঁয়া লাগে
একটি নিষেধ কেন
চির বসন্ত হয়ে জাগে।
কথা ঃ শ্যামল গুপ্ত। সুর ঃ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ।
ছবি ঃ আঁধারে আলো।
৩২.
ও ঝরা পাতা এমনি তুমি
যেও না যেও ঝরে
বোল না বিদায় অমন করে।
৩৩.
হাতে কোন কাজ নেই
টেবিলেতে একরাশ বই
বইয়ের পাতায় মন কই
থেকে থেকে হাওয়া বয়।
৩৪.
যেখানে স্বপ্ন সুরে রইবে ভরে
তোমার আমার মন,
সেখানে তোমায় আমি গান শোনাব
রইল নিমন্ত্রণ।
৩৫.
তুমি না হয় রহিতে কাছে –
কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে
আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে।
৩৬.
বাঁশী বুঝি আর নাম জানে না
ডাকে বাঁশী রাধা বলে
লোক লাজ মানে না।
৩৭.
বধূয়া এলো না
পাখীরা ফেরেনি নীড়ে
আঁধার নামিল ধীরে
পথ বুঝি খুঁজে পেল না।
আজ অভিমান ভরে
প্রদীপ জ্বালিনি ঘরে
তবু তো বোঝে না হিয়া
আশা তবু গেল না।
৩৮.
চিনেছি তোমারে অচেনার মাঝে
ছিল যত কথা বলিনি তা লাজে ।
দেখেছি তোমায় চোখের তারাতে
হৃদয় হারাতে এমন যে সাজে।
৩৯.
তোমারে হারানো তো নয়
এ শুধু আমার নয়নের জলে
শ্রাবণ ধারায় যেন ফিরে পাওয়া
তোমারই হৃদয়।
স্মৃতির রাখাল অলস বাঁশীতে
জাগালো আমায় গোপন হাসিতে।
মোর বাতায়নে সারা রাত পথ চেয়ে
প্রদীপ প্রহরী শুধু জেগে রয়।
ওই স্বর্ণালী সন্ধ্যা কিসের আশায়
অকুল আঁধার আনে
মোর ব্যথা ভরা মন ফিরে যেতে চায়
হারানো অতীত পানে।
পাষাণ নিয়তি নিঠুর আঘাতে
হৃদয় আমার চায় যে জাগাতে
হায় বিজয়ারই ব্যথা লয়ে একা একা
নীরবে কাঁদিতেছে যেন দেবালয়।

লেখক : প্রাবন্ধিক ; রূপনগর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!