1. admin@pathagarbarta.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবি অনুদ্বৈপায়নের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪
  • ১২৬ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টার : কলম্বো পানের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার জন্য প্রস্ততি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবি অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের। ফ্লাইট ছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ রাতে। তাই ২০শে মার্চ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য নবীগঞ্জে বাড়ীতে এসেছিলেন মা-বাবা, ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের থেকে বিদায় নিতে। ২৪শে মার্চ সকাল ৭টার সময় মা-বাবাকে প্রণাম করে বাড়ী থেকে রওয়ানা হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য। ২৫শে মার্চ সকাল ৯টার দিকে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য জগন্নাথ হলের ব্যাচেলর রুমে পৌছেন। ওই দিন বিকাল ৪টায় বন্ধু নির্মলমন্ডল দেখা করতে আসেন তাঁর সাথে। অনেক সময় আলাপ হয় তাদের মধ্যে। রাতে আবার আসার কথা থাকলেও আর আসা হয়নি। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়েছিলেন বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যেতে। পরদিন রাতেই স্বপ্ন পূরনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সব তছনছ হয়ে অনুদ্বৈপায়নকে পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে। ২৬শে মার্চ সকালে বুলেটের আঘাতে রুমের দরজা ভেঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্যকে বের করে পাকবাহিনীর জোয়ানরা। অনুদ্বৈপায়নের হাত দুটো পেছন মোড়া করে বেধে উপুর করে বসিয়ে রেখেছিল এবং তার সারা শরীর রাইফেলের বাঁট-বুট দিয়ে আঘাত করতে করতে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। পরে জগন্নাথ হলের দনিবাড়ীর সামনে অন্যান্যদের সাথে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। একই সঙ্গে নিহত হন বিখ্যাত দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব। তাদের সঙ্গে থেকে ভাগ্যক্রমে বেচেঁ যান কালী রঞ্জন শীল। তার মৃত্যুতে বাঙ্গালীর সংখ্যা থেকে শুধু একজনমানুষই কমে যায়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হারায় একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষা-গবেষক, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জবাসী হারায় একজন বুদ্ধিজীবি কৃতিসন্তান।

১৯৪৫ সালের ৩১শে জানুয়ারী নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামের এক সম্রান্ত ব্রাম্মন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য। পিতা স্কুল শিক্ষক দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য্য এই অঞ্চলের একজন নামকরা আয়ুবের্দিক চিকিৎসক এবং মাতা রাজলী ভট্টচার্য্য একজন আদর্শ গৃহিনী ছিলেন। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন। ছোট ভাই বোনেরা হচ্ছেন শক্তিপদ ভট্টাচার্য্য, দিবাকর ভট্টাচার্য্য, কল্যানী ভট্টাচার্য্য, যুথী ভট্টাচার্য্য এবং বাংলাদেশে একমাত্র উত্তরাধিকারী প্রীতিলতা ভট্টাচার্য্য। পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে অনুদ্বৈপায়নের ওপর অনেক আশা নিয়ে তাকিয়েছিল তাঁর পরিবারের লোকজন। ১৯৫৬ সালে নবীগঞ্জ যোগল কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য। একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে আজও তার সুখ্যাতি রয়েছে। ১৯৬১ সালে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য গণিত এবং সংস্কৃত বিষয়ে লেটার মার্কসহ ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন। পরে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন মুরারী চাঁদকলেজের শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসে। ১৯৬৩ সালে তিনি ইন্টামিডিয়েটে প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করেন। এরপর অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। থাকতেন জগন্নাথ হলে। ১৯৬৬ সালে পদার্থবিদ্যা ভিাগে প্রথম শ্রেণীতে ৩য় স্থান অধিকার করে বিএসসি সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নবপ্রতিষ্টিত ফলিত পদার্থ বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এর পরের বছরই ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। একই বছর তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক হিসাবেও নিযুক্তি পান। পদার্থবিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের তীব্রতা ছিল তাঁর বেশী। তাই বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে গবেষনায় যেতে চেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে বাড়ীতে মাকে চিঠিতে লেখেন, স্কলারশীপটা এবারও হলো না মা, অসুবিধা খুব বেশী। যাক, চিন্তার কোন কারন নেই। তোমর আশীর্বাদ থাকলে যত দেরীই হোক বিদেশ আমি যাবই। কেই আটকাতে পারবে না। কারন পিএইচডি ডিগ্রীটা অনেকেই বেশী বয়সেও করে থাকে। কাজেই আমি নিজেও এজন্য চিন্তা করছি না। পরিবেশ যখন খারাপ কষ্ট তো করতেই হবে। কলম্বো পানের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার দিনই অনুদ্বৈপায়নকে পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে।
স্বাধীনতার পর অন্যান্যের সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্যরে নামেও বাংলাদেশ সরকার ২ টাকা মূল্যে ডাকটিকিট বের করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জগন্নাথ হলের সংসদ ভবনের নাম রাখা হয়েছিল অনুদ্বৈপায়ন ভবন। ভবনটি আকস্মিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় অনেক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন নামটিও মুছে যায়। বর্তমানে আছে অনুদ্বৈপায়ন স্মৃতি পাঠক। শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্যরে স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নবীগঞ্জ থানা সদর পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ-কলেজ রোডে জন্তরী গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার নামকরন করা হয় ‘অনুদ্বৈপায়ন সড়ক’। শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্যের স্মৃতিকে বিকশিত করতে নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়কের পাশে নবীগঞ্জ কলেজ সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে গত ১৪ই নভেম্বর ২০১৬ইং তারিখে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর একান্ত প্রচেষ্টায় একটি মনোরম স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া নবীগঞ্জ-করগাঁও সড়কে সিলেট-হবিগঞ্জ আসনের মহিলা সংরক্ষিত সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর উদ্যোগে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!