তৈল
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
তৈল যে কি পদার্থ, তাহা সংস্কৃত কবিরা কতক বুঝিয়া ছিলেন। তাঁহাদের মতে তৈলের অপর নাম স্নেহ। বাস্তবিকও স্নেহ ও তৈল একই পদার্থ। আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ কর অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তৈল দিয়া থাকি। স্নেহ কি? যাহা স্নিগ্ধ বা ঠান্ডা করে, তাহার নাম স্নেহ। তৈলের ন্যায় ঠান্ডা আর কিসে করিতে পারে?
সংস্কৃত কবিরা ঠিক বুঝিয়া ছিলেন। যেহেতু তাঁহারা সকল মানুষ্যকেই সমান রূপে স্নেহ করিতে বা তৈল প্রদান করিতে উপদেশ দিয়াছেন।
বাস্তবিকই তৈল সর্বশক্তিমান; যাহা বলের অসাধ্য, যাহা বিদ্যার অসাধ্য, যাহা ধনের অসাধ্য, যাহা কৌশলের অসাধ্য, তাহা একমাত্র তৈল দ্বারা সিদ্ধ হইতে পারে।
যে সর্বশক্তিময় তৈল ব্যবহার করতে পারে, সে সর্বশক্তিমান। তাহার কাছে জগতের সকল কাজই সোজা। তাহার চাকরির জন্য ভাবিতে হয় না, উকিলিতে পসার করিবার জন্য সময় নষ্ট করতো হয় না, বিনা কাজে বসিয়া থাকিতে হয় না, কোন কাজেই শিক্ষানবীশ থাকিতে হয় না।
যে তৈল দিতে পারিবে, তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসার হইতে পারে, আহাম্মুক হইলেও ম্যাজিস্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভরাম হইয়াও উরিষ্যার গভর্নর হইতে পারে।
তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল নহিলে জগতের কোন কার্য সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না, চেহারা খোলে না, হাজার গুণ থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না, তৈল থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।
বিদ্র. বিখ্যাত লেখক হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর (১৮৫৩-১৯৩১) তৈল নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া।
Leave a Reply