পাঠাগার বার্তা ডেস্ক : গেল দুই বছর আগে রাজধানীর শাহবাগে ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প’র কাজ শুরু হয়। আর চলমান নির্মাণ কাজের জন্য সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হয় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ভবনে। তবে এরপর থেকে যেন হারিয়ে গেল গ্রন্থাগারের সেই চিরচেনা চিত্র। বইপ্রেমী পাঠক যেমন কমেছে, তেমনি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীও নেই। এছাড়াও অস্থায়ী ভবনে বই প্রদর্শনে পর্যাপ্ত জায়গাই নেই। ফলে, বাক্সবন্দি রয়ে গেছে অসংখ্য বই।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরে বাধ্য হয়েই গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম শাহবাগ থেকে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ভবনে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থানগত পরিবর্তনের কারণে পাঠক দর্শনার্থীতে ভাটা পড়ে। যদিও এক সময় জাতীয় গণগ্রন্থাগারের বেশ ভালো উপস্থিতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষের কাছে এক উৎকৃষ্ট জায়গা ছিল এই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।
জাতীয় গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২২০ জন। সাময়িক স্থানান্তরিত আইইবি ভবনে এখন গড়ে মাসে ৬০ থেকে ৭০ জন পাঠক আসেন। মাস জুড়ে ইস্যু হয় গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি বই। যদিও শাহবাগে একটা সময় এই সংখ্যা ছিল কয়েক গুণ, দৈনিক গড়ে ১ হাজার থেকে হাজার ২০০ এর মতো পাঠক দর্শনার্থী আসত ইস্যুও হতো শ’খানেক বই।
২ লাখ ৭০ হাজারের বই সংগ্রহশালার এই জাতীয় গ্রন্থাগারেও স্থানান্তরিত হওয়ার আগে চাকরি প্রত্যাশীরা এখানে বেশি ভিড়ত। এখন অবস্থানগত কারণে সেটিও সীমিত হয়ে এসেছে, এখন সংখ্যায় গবেষক-লেখকদের আনাগোনা তুলনামূলক বেড়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় গ্রন্থাগারে অস্থায়ী ভবনে বই পড়তে এসেছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক সাইদুর রহমান সাঈদ। ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয় বই পড়তে আসা ষাটোর্ধ্ব বইপোকার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের যে সময় ছিল, ঐ সময়ে লোক সমাগম ছিল। একাডেমি বইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও পাবলিক লাইব্রেরিই একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু এখন নিঃসন্দেহে পাঠক বেড়েছে, এটা বলার অবকাশ রাখে না। তবে মনন তৈরিতে বই পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়েনি।
সাইদুর রহমান সাঈদ বলেন, বই মানুষের মনন তৈরি করে। বই না পড়লে এই মনন তৈরি হয় না। এই মনন যদি মানুষের সৃষ্টি না হয়, মানুষ হিসেবে প্রকৃত ব্যাখ্যা আমরা দাঁড় করাতে পারব না। তাই বই নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। ছোট থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে অভিভাবকদের।
স্থান পরিবর্তনে পাঠক কম আসে বলে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবস্থান পরিবর্তন নিঃসন্দেহে সমাগম কমেছে। আমার নিজেরও এখন কম আসা হয়। তবে হয়ত স্বরূপে ফিরলে উপস্থিতি অনেকাংশেই বেড়ে যাবে।
যদিও উপস্থিতির বিষয়টি অবস্থানগত কারণে অনেকাংশেই কমেছে এমনটা স্বীকার করেন জাতীয় গণগ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম আলম। তিনি বলেন, এখন তুলনামূলকভাবে অবস্থানগত কারণে কমেছে। তবে এর পাশাপাশি লেখক-গবেষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এখনো আসছেন। বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজারের বইয়ের পাশাপাশি নিয়মিত ১৩টি পত্রিকা ও বিদেশি কিছু সাময়িকী রাখা হয়।
গণগ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা এই সহকারী পরিচালক আরো বলেন, এখন আমরা সীমিত পরিসরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অনেক বই এখনো বক্স বন্দি রয়েছে, জায়গা সংকুলানের কারণে সেগুলো আমরা প্রদর্শন করতে পারছি না। যার ফলে পাঠক উপস্থিতি কমেছে, যখন আমরা বড় পরিসরে চলে যাব, তখন এই সংকটটি কেটে যাবে।
Leave a Reply