জগৎ সরকার : বিচার সালিশের প্রবাদ পুরুষ
রত্নদীপ দাস (রাজু)
সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যমলা এই বঙ্গ দেশে দেশমাতৃকার অনেক গুণী সন্তান নিজেদের কর্মগুণে মহিমান্বিত হয়ে আছেন। মৃত্যুর বহুকাল পরেও তাঁরা সমকালীন সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। তেমনি একজন স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব জগৎ চন্দ্র চৌধুরী। কমনওয়েলথ ভূক্ত দেশ সমূহে ব্রিটিশ শাসনামলের আইন সমূহ এখনও প্রচলিত রয়েছে। এর ব্যতিক্রম আমাদের দেশেও নয়। কিছু কিছু দেশে কিছুটা সংস্কারও হয়েছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশের জেলা জজ বাহাদুর আদালত গুলোতে ‘জুরিবোর্ড’ এর প্রচলন ছিল। বর্তমানে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত (শুধু সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে, এর বর্তমান নাম ‘এমিকাস কিউরি’ বা ‘আদালতের বন্ধু’)। জুরিবোর্ডের কার্যক্রম ছিল আদালতকে সহযোগীতা করা। অর্থাৎ বিভিন্ন জটিল বিষয়াদি জুরিবোর্ড কর্তৃক সালিয়ানার মাধ্যমে মীমাংশিত করা। এর জন্য সমাজের সালিশ বিচারক বা পাবলিক ফিগারদের নিয়োগ করা হতো। এই নিয়োগকৃতদের বেশির ভাগই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও স্ব স্ব এলাকার বিচার-বৈঠক পরিচালনায় ছিলেন পারদর্শী। তাঁরা তাঁদের জ্ঞান-প্রজ্ঞা দ্বারা বছরের পর বছর যে সব জটিল মামলা অমীমাংসিত থেকে যেত, সে গুলিও কোর্টের বাইরে মীমাংসা করে দিতেন অনায়াসে। সেই সকল সালিশ বিচাকরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ এলাকার বিচার সালিশের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব জগৎ চন্দ্র চৌধুরী (১৯১৩-১৯৭৩)।
জগৎ চন্দ্র চৌধুরী পোষাকি নাম, তবে এলাকাবাসী, কিছু প্রবাসী বাঙ্গালি ও পরিচিত বলয়ে সর্বত্রই ‘জগৎ সরকার’ এই নামেই ছিলেন অত্যন্ত সুপরিচিত ও সমাদৃত। জগৎ সরকার অবিভক্ত ভারতবর্ষের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলাধীন বানিয়াচং থানার মাকালকান্দি গ্রামে আনুমানিক ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা দুর্যোধন চৌধুরী ও মাতা প্রিয়লতা বালা চৌধুরী। দুর্যোধন চৌধুরী ছিলেন প্রচুর ভূ-সম্পত্তির অধিকারী। তাঁর পূর্বজদের মধ্যে ‘সুন্দর মোড়ল’ ছিলেন নাম, যশ ও খ্যাতিতে বিখ্যাত। তাঁর নামানুসারেই তাঁর বংশধরদের গোষ্ঠীর নামকরণ করা হয় ‘সুন্দর মোড়ল’ এর গোষ্ঠী। দুর্যোধন-প্রিয়লতা দম্পতির বিবাহিত জীবনের কয়েক বছর অতিক্রান্ত হলেও তাঁরা কোনও সন্তানের মুখ দেখতে পারছেন না। তবুও গৃহদেবতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি সহকারে পূজার্চনা করে যাচ্ছেন। ভগবানের কৃপায় প্রিয়লতা সন্তান সম্ভবা হলেন। কিন্তু গর্ভ নষ্ট হয়ে গেল। এভাবে ৪/৫ বার নষ্ট হতে থাকলে হঠাৎ প্রিয়লতা একদিন আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে এক নারী কন্ঠে দৈব বাণী হল- ‘এবার তোমার সন্তান আসবে। সে তোমার মুখ উজ্জ্বল করবে। সে সুপুরুষ ও বিখ্যাত হবে। তাকে স্বযত্নে রাখিও।’ এই বলে দৈব বাণী থেমে গেল। সাথে সাথে তিনি শয্যা ত্যাগ করে দেখলেন ভোর হয়ে গেল। এর প্রায় ৫ মাস পর তিনি গর্ভধারন করলেন এবং উপযুক্ত সময়ে সন্তান ভূমিষ্ট হল। নাম রাখলেন ‘জগৎ’। শিশু জগৎ পিতা-মাতা ও পরিজনদের কাছে অতি আদরের সাথেই বেড়ে উঠতে লাগলেন।
বাল্যকাল থেকেই জগৎ ছিলেন- জেদী, বিনয়ী, নির্ভিক ও পরিশ্রমী। খেলাধুলা ও পাখি শিকার ছিল তাঁর প্রিয় শখ। এমনি এক সময়ে তাঁর পিতা তাঁকে ভর্তি করান জগন্নাথপুর থানার হরিনাকান্দি এম.ই স্কুলে। সেখানে পড়াশোনা শেষ হলে ভর্তি হন নবীগঞ্জ থানার নবীগঞ্জ জে. কে হাইস্কুলে। নবীগঞ্জ জে. কে হাইস্কুলে তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফতেপুর গ্রামের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব ক্ষেত্রমোহন রায় চৌধুরী (হবিগঞ্জ লোকালবোর্ডের প্রাক্তন সদস্য)। নবীগঞ্জ জে. কে হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়েই তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয়। হাইস্কুলে অনুষ্টিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে অংশগ্রহন ও যাত্রপালায় অভিনয় করে তিনি কৃতিত্ব দেখান। নবীগঞ্জ জে. কে হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণি পাশ করেই তিনি পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বাড়ি ফিরেন।
গ্রামে এসে বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। ফুটবল খেলা ও যাত্রাদলে অভিনয় ছিল তাঁর শখ। তাই তিনি ফুটবল খেলার আয়োজন করতেন ও দক্ষতার সাথে তা পরিচালনা করতেন। এর ফলে বিভিন্ন গ্রামের যুবকরা খেলায় অংশগ্রহন করতেন। তাছাড়া তিনি যাত্রাদলেরও পরিচালনা করতেন। যাত্রাপালায় তিনি রাজার চরিত্রে ভাল অভিনয় করতে পারতেন। রাজার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হন। পাশাপাশি নিজ গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের বিচার-বৈঠকে তিনি দর্শক বা শ্রোতার সারিতে বসে তা অনুধাবন করতেন। এভাবে এলাকার মধ্যে তাঁর এক পর্যায়ে পরিচিতি বিস্তৃত হয়। তাঁর সত্যবাদীতা, সাহসিকতা, উত্তম চরিত্র ও বিনয়ী স্বভাবের কারনে যুব সমাজ তথা মুরুব্বিয়ানদেরও প্রিয় ও সমীহের পাত্র হয়ে ওঠেন। আস্তে আস্তে এলাকায় তাঁর নাম ডাক বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিচার প্রার্থীরা তাঁর বাড়িতে ভীর জমাতে থাকেন। তিনিও সাধ্যমত সৎ সাহসীকতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় বিচারে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে আসতেন। তাঁর বিচারিক দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, বাগ্মিতা ও সাহসীকতায় একটা সময় হয়ে ওঠেন বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ তথা ভাটী অঞ্চলের সালিশ বিচারের প্রবাদ পুরুষ। ‘জগৎ সরকার’ এই নামটি উচ্চারনের সাথে সাথে মানুষের মানসপটে ভেসে উঠতো ন্যায় বিচারের প্রতিচ্ছবি।
জগৎ সরকার যে আমলের লোক ছিলেন, সে আমলে ছিল সরপঞ্চ (বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা) পদ্ধতি। এমনি করে একদিন তিনি সার্কেলের সরপঞ্চায়েত নির্বাচিত হন। তাঁর সাথে স্বগ্রাম নিবাসী শ্রী কর্ণমোহন চৌধুরীও (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) সরপঞ্চায়েত নির্বাচিত হন। জগৎ সরকার একঝাক সৎ, উদ্দমী ও নিষ্টাবান ব্যাক্তিদের নিয়ে নিজ গ্রাম ও এলাকার বিচার-বৈঠক পরিচালনা করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতেন। এই গুণিজনরা হলেন- স্বগ্রাম নিবাসী শ্রী রমেশ চৌধুরী, শ্রী মহানন্দ সরকার, শ্রী কর্ণমোহন চৌধুরী (সরপঞ্চায়েত), শ্রী বিশ্বনাথ সরকার, শ্রী গিরিশ চন্দ্র চৌধুরী, শ্রী আনন্দ সরকার, শ্রী সুন্দন মজুমদার, শ্রী ইন্দ্রমোহন সরকার, শ্রী গোপাল চৌধুরী, শ্রী জগবন্ধু সরকার, শ্রী সরুজ কান্তি চৌধুরী, শ্রী প্রফুল্ল চৌধরী প্রমুখ ব্যক্তিরা ছিলেন এলাকার জন্য নিবেদিত প্রাণ। তাছাড়া তিনি একসময় তহসিলদারের দায়িত্বও পালন করেন।
জগৎ সরকার একজন সফল কৃষক ছিলেন । পিতার বিশাল ভূ-সম্পত্তিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে অধিক ফলনশীল জমি তৈরী করে ছিলেন। তিনি কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে পৈত্রিক সম্পত্তির আরও বিস্তৃতি করেন। এখনও মকার হওয়রে তাঁর নামানুসারে ‘জগৎবেড়’ নামক জায়গা তাঁর স্মৃতি বহন করে আছে। পারিবারিক জীবনে তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন কাঞ্চনপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান গগন চন্দ্র তালুকদার ও ক্ষেত্রময়ী তালুকদারের কন্যা বিনোদিনী তালুকদারেরর সাথে প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের ২ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তান।
১৯৫৪ সালে হবিগঞ্জ লোকালবোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি এলাকাবাসীর চাপে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লাখাই থানার মুরাকরি গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্তান বৃন্দাবন কলেজের ইতিহাস বিভাগের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শ্রী বীরেন্দ্র কুমার চৌধুরীকে (বিকে চৌধুরী এম.এ) পরাজিত করে হবিগঞ্জ লোকালবোর্ডের সদস্য পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তৎকালীন হবিগঞ্জ লোকালবোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বানিয়াচং থানার পুকড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিরারের সন্তান গিরিন্দ্র নন্দন চৌধুরী। হবিগঞ্জ লোকালবোর্ডের সদস্য হিসেবে তিনি ভাটী অঞ্চলের জন্য যেমন কাজ করেছেন, তেমনি নির্বাচনী এলাকার বাইরেও সামাজিক বিচারে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। বিচারে তাঁর উপস্থিতি জুলুমকারীর বিরুদ্ধে ও নির্যাতিতের পক্ষে ন্যায় প্রতিষ্টায় ছিল অনিবার্য। যত ক্ষমতাবান কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন, তিনি নির্ভিকতার সাথে পক্ষপাতীত্বের উর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেন। যত কঠিন ও দুরুহ বিষয়ই হোক না কেন, তিনি উপস্থিত হলে তা নিষ্পত্তি করতেন অনায়াসে। বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, লাখাই, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল সহ বিভিন্ন এলাকার সালিশ বিচারে তাঁর সাহসী ও ন্যায়পরায়ণ বলিষ্ঠ ভূমিকা তাঁকে করে তুলেছিল সালিশ বিচারের এক প্রবাদ পুরুষ রূপে। ‘জগৎ সরকার’ এই নামটি উচ্চারিত হতো শ্রদ্ধার সাথে। কোনও বিচার-বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি কঠিন পরিস্থিতিতে শূণ্যতা বিরাজ করতো। ঐ সময়ে উল্লেখিত এলাকায় আরও যে সকল গুণী ব্যক্তিবর্গ তৎকালীন সামাজিক বিচারে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেন, তাঁদের নাম উচ্চারিত না হলে আমার লেখাটি হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেই সকল বিচারকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন- নবীগঞ্জের প্রবাদ পুরুষখ্যাত জমিদার শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত (বিধুবাবু), বাবু গোপাল কৃষ্ঞ মহারত্ন, জনাব ডাক্তার মিম্বারুর রহমান চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান, নবীগঞ্জ), ক্ষেত্রমোহন রায় চৌধুরী (হবিগঞ্জ লোকালবোর্ডের প্রাক্তন সদস্য), জনাব হীরা মিয়া (সাবেক হবিগঞ্জ লোকালবোর্ড সদস্য), বাবু প্রভাতমোহন ঘোষ (সাবেক চেয়ারম্যান, বাউসা ইউপি, নবীগঞ্জ), বাবু লাবণ্য কুমার চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান, কারগাঁও ইউপি, নবীগঞ্জ), বাবু কুটিশ্বর দাশ (সাবেক চেয়ারম্যান, কারগাঁও ইউপি, নবীগঞ্জ), বাবু নিবারণ চন্দ্র চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান, কারগাঁও ইউপি, নবীগঞ্জ), জনাব আজিজুর রহমান চৌধুরী ছুরুক মিয়া (সাবেক চেয়ারম্যান, বড় ভাকৈর ইউপি, নবীগঞ্জ) , জনাব ধন মিয়া সাব (বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব, আজমিরিগঞ্জ), বাবু কবিন্দ্র তালুকদার (সাবেক চেয়ারম্যান, শাল্লা), বাবু মতিলাল দাশ (সাবেক চেয়ারম্যান, পশ্চিম বড় ভাকৈর ইউপি, নবীগঞ্জ), বাবু কাশীনাথ দাশ তালুকদার (বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক, মেঘারকান্দি, জগন্নাথপুর), জনাব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী (বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব, কুলঞ্জ, দিরাই ), বাবু মহেন্দ্র কুমার দাস রায় (সরপঞ্চ, জগন্নাথপুর, নবীগঞ্জ), বাবু সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাশ (সাবেক চেয়ারম্যান, কাগাপাশা ইউপি, বানিয়াচং), জনাব মিরাজ মিয়া (বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব, বর্গী, বানিয়াচং), সুধীর বাবু (বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব, দিরাই), জনাব কবির মিয়া (সালিশি ব্যক্তিত্ব, কাগাপাশা), জনাব সাবাজুর ইসলাম খান তালুকদার (সাবেক চেয়ারম্যান, বগী), জনাব আখমত খান (সাবেক মেম্বার, বগী), জনাব করিম মিয়া (সাবেক মেম্বার, বাঘহাটা), জনাব ইয়াসিন তালুকদার (সালিশি ব্যক্তিত্ব, বগী), জনাব জলিল হাজী (সালিশি ব্যক্তিত্ব, মকা), জনাব মো: রুস্তম আলী (সালিশি ব্যক্তিত্ব, চমকপুর), বাবু বনমালী চৌধুরী (খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, বৈচাখালি, ঝিলুয়া) বাবু দেবেন্দ্র চৌধুরী (সালিশি ব্যক্তিত্ব, ঝিলুয়া), বাবু নবনী সরকার (সালিশি ব্যক্তিত্ব, আমড়াখাইর), জনাব আমান উল্লা (সালিশি ব্যক্তিত্ব, আমড়াখাইর), ধলাই উল্লা (সালিশি ব্যক্তিত্ব, আমড়াখাইর), বাবু ডা: রাজিন্দ্র দাশ (সালিশি ব্যক্তিত্ব, সুখলাইন, শাল্লা), বাবু তারাপদ রায় (বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব, হরিনগর), বাবু ভাগ্যেশ্বর দাশ (বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব ও আওয়ামীলীগ নেতা, মুক্তাহার), বাবু রূপেশ চক্রবর্তী (বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব, মুক্তাহার), জনাব সুজাত মিয়া (সরপঞ্চ, বাগাউড়া), জনাব মোঃ সাবাজ মিয়া (সালিশি ব্যক্তিত্ব, দৌলতপুর) জনাব মোঃ সবুজ মিয়া (সালিশি ব্যক্তিত্ব, গ্রাম দৌলতপুর), জনাব টেকা মিয়া (সালিশি ব্যক্তিত্ব, শেরপুর), জনাব তারা মিয়া চৌধুরী (সালিশি ব্যক্তিত্ব, কাগাপাশা), বাবু সুরেশ সরকার (সালিশি ব্যক্তিত্ব, ইছিপুর), বাবু গোপেশ রায় (সালিশি ব্যক্তিত্ব, গোগ্রপুর), বাবু সতীশ সরকার (সালিশি ব্যক্তিত্ব, মাকালকান্দি) প্রমুখ (আরও অনেকই ছিলেন যাঁদের নাম এ স্বল্প পরিসরে আমি লিখতে পারিনি বলে আন্তরিকভাবে দু:খিত। তাঁরা সকলেই আমার পরম শ্রদ্ধার পাত্র এবং তাঁরা সবাই প্রয়াত, তবুও আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা রাখি)। শুধু আঞ্চলিকতার মধ্যেই তাঁর কর্ম পরিধি সীমিত ছিল না, জাতীয় বিষয়েও তিনি ছিলেন সক্রিয়। ১৯৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
জগৎ সরকার ছিলেন রসিক প্রকৃতির মানুষ। বিভিন্ন সালিশ-বৈঠকে তাঁর আলাপের মজাই আলাদা। তিনি বৈঠক চলাকালে বিভিন্ন কথা গল্পের ছলে বলতেন। বিভিন্ন ঘটনা উদাহরন সরূপ বলতেন। একদিন দিরাই থানায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী তাঁকে বললেন- “আপনার গ্রাম মাকালকান্দি একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী গ্রাম। কিন্তু আপনার গ্রামের নাম বলার সময় বলা হয় ঝিলুয়া-মাকালকান্দি, অর্থাৎ ঝিলুয়া আগে বলা হয়। এতে কি আপনার গ্রামকে ছোট করে দেখা হয় না?” উত্তরে তিনি বললেন- ‘রাধা কৃষ্ণ একসাথে বলার সময়, রাধা নামটি আগে উচ্চারিত হয়। রাধা হচ্ছেন কৃষ্ণ অতিপ্রিয় ভক্ত, তারপরও রাধা নামটি আগে বলা হয়। এর কারন হচ্ছে ভগবান তখনই আনন্দ পান, যখন তাঁর ভক্তকে সর্ব্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়। ঝিলুয়া গ্রামের নাম আগে বললে দোষের কি আছে? ঝিলুয়া-মাকালকান্দি একসাথে বললে তা মধুর থেকে মধুরতর হয় এবং একটা গভীর বন্ধন সৃষ্টি করে, যেন একই মায়ের সন্তান আমরা।’ তাঁর এ কৌতুহলি বক্তব্য উপস্থিত সকলকে মোহিত করে এবং উপস্থিতস্থল আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে।
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। শিক্ষার প্রতি ছিল তাঁর আগ্রহের অন্তছিল না। তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষা প্রসার ছাড়াও বাল্লা জগন্নাথপুরে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্টার জন্য মহেন্দ্র কুমার দাশ রায় (সরপঞ্চ, জগন্নাথপুর), কাশীনাথ দাশ তালুকদার (শিক্ষক, সমাজসেবক, মেঘারকান্দি), মতি লাল দাশ (সাবেক চেয়ারম্যান, জগন্নাথপুর) প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন একটি হাইস্কুল স্থাপনে। ১৯৬১ সালে বাল্লা জগন্নাথপুর এসএনপি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৬৯ সালে পূর্ববঙ্গ স্বাধীকারের চেতনায় জ্বেলে উঠলে জগৎবাবুও ঘরে বসে থাকতে পারেন নি। স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে লাগলেন নিজ এলাকাজুড়ে। তারপর ১৯৭০ সাল। দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্টিত হল। জগত সরকার তাঁর সংগীয় বিচাক মন্ডলী ও কর্মী বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার কাজে। নবীগঞ্জ-বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ-এ জাতীয় পরিষদের আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব:) এম এ রব ও বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ আসনে প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী বাবু গোপালকৃষ্ণ মহারত্নকে নির্বাচিত করতে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করে তাঁদের বিজয় নিশ্চিত করেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশ একটি অনিবার্য যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায়। দেশ জুড়ে যেমন শুরু হয় মুক্তিবাহিনী গঠনের কাজ, তেমনি পাকিস্তানপন্থীদের নেতৃত্বে গঠিত হয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের কাজও। জগৎ সরকার মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে বৈঠক করেন মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি পুরুষ শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত (বিধুবাবু), জনাব আজিজুর রহমান চৌধুরী ছুরুক মিয়া (সাবেক চেয়ারম্যান, বড় ভাকৈর ইউপি, নবীগঞ্জ), মহেন্দ্র কুমার দাশ রায় (সরপঞ্চ, জগন্নাথপুর), বাবু মতিলাল দাশ (সাবেক চেয়ারম্যান, পশ্চিম বড় ভাকৈর ইউপি, নবীগঞ্জ), বাবু কাশীনাথ দাশ তালুকদার (বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক, মেঘারকান্দি, জগন্নাথপুর) প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে। সাধারণ মানুষকে কীভাবে বাঁচানো যায় এবং যুবকদের সংগঠিত করে যুদ্ধে যোগদানের জন্য। এদিকে গোপালকৃষ্ণ মহারত্ন এমপিএ দেশত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার কালে মাকালকান্দি এসে জগৎ সরকারের সাথে দেখা করেন এবং মাকালকান্দিতে ২ রাত্রি যাপন করেন। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করতে থাকলে জগৎ সরকার বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ভারতের বালাট চলে যান, যাওয়ার সময় গ্রামবাসীকে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ করেন। বালাটের ২নম্বর ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে যখন দলবেঁধে শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতো, তখন তিনি আগন্তুক লোকজনদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করতে এবং যুবকদের যুদ্ধে যোগদানের উৎসাহ ও পরামর্শ দিতেন। ১৯৭১ সালের ১৮ অগাস্ট (৩১ শে শ্রাবণ) নিজগ্রামের নৃশংস গণহত্যার খবর তাঁকে মর্মাঘাত করে। খুঁজ নিতে থাকলেন গ্রামের কে কোন দিকে গেল। যাকে পান তাকেই শরনার্থী ক্যাম্পে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এমনি করে তিনি শরনার্থী শিবিরের বালাট ২ নম্বর ক্যাম্পের ভলেন্টিয়ার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর ভারতের শরনার্থী ক্যাম্প থেকে মানুষ যখন দলবেঁধে নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে লাগলো, তখন জগৎ সরকারও স্বদেশের প্রত্যাবর্তন করলেন। কিন্তু থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নাই। ভিটেটুকু ছাড়া সব লুটে নিয়ে গেছে লুটেরারা। চারদিকে এক অরাজকতা বিরাজমান। ঐ সময় বানিয়াচং এর গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দর উদ্যোগে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, লুটপাটকৃত মালামাল ফেরত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এক সভা আয়োজিত হয়। এ সভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বানিয়াচং এর ঐতিহাসিক খেলার মাঠ এলারিয়ায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ। তাছাড়া তিনি গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণসহ নানাভাবে সহযোগীতা করেন।
জগৎ সরকার ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এক মানব প্রেমিক। হিন্দু কিংবা মুসলিম, কাছের কিংবা দূরের, আত্মীয় কিংবা অপরিচিত যে কেউ তাঁর কাছে আসলে তিনি সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করতেন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতেন। সমাজে সংগঠিত যে কোন বিবাদ নিজ উদ্দ্যোগে নিরপেক্ষভাবে নিস্পত্তি করতেন। তাঁর বিচারের নীতি ছিল By hoke or croct. অর্থাৎ যেন তেন ভাবে সমস্যা সমাধান করা। তিনি তাঁর বিচক্ষণতা দ্বারা পক্ষদ্বয়ের বক্তব্য শোনে ও বিশ্বাস অর্জন করে বিবাদ নিষ্পত্তি করতেন। বাদী বিবাদী দুপক্ষই তাঁর রায়ে সন্তুষ্ট হতো। কিন্তু সাদা মনের, সদাচারী, ন্যায়পরায়ণ এ মানুষটির অন্তিম যাত্রা ছিল পাশবিকতার এক নিকৃষ্ট উদাহরন। আজও তাঁর হত্যাকান্ডের কথা শোনলে গা শিউরে ওঠে। জগৎ সরকারের নেশা, পেশা, স্বভাব চৈতন্য জুড়ে ছিল সমাজের বিশৃঙ্খল বিষয় গুলি সালিশে নিস্পত্তি করে সমাজে শান্তি স্থাপন করা। তেমনি একদিন মাকালকান্দি গ্রামের অনতিদূরবর্তী ‘বগী’ নামক গ্রামে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চলছে। তখন স্থানীয় মুরুব্বিয়ানগণ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ (১২ চৈত্র ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ রোজ রবিবার) এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। ঐ বিচারে জগৎ সরকারের পাশাপাশি গ্রামের বিশিষ্ট জনদের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন- রমেশ চৌধুরী, মহানন্দ সরকার, আনন্দ সরকার সহ আরও অনেকে। কিন্তু মাকালকান্দি গ্রামের কোন মুরুব্বিয়ানই এই বিচারে অংশগ্রহন করেন নি। এমনকি সবাই তাঁকেও যেতে কঠিনভাবে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি বলেন- ‘এই জগতের কোন শত্রু নেই।’ তিনি যথা সময়ে বিচারে উপস্থিত হলেন। কিন্তু বিচার দুপুরবেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় বিকেলে এবং সন্ধার পরে শেষ হয়। বিচার শেষ হলে তিনি আপ্যায়ন পর্বে অংশ নিয়ে যখন বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা হন তখন রাত নেমে আসে। রাতের অন্ধকারে একা একাই আসছেন। রাস্তায় বগী নদীতে এক ঋষি নদী পাড়াপাড় করতো। ঋষি নদী পড়াপড়ের সময় কয়েকজন যুবকের কানাঘোষা শুনে অনেকটাই অনুমান করে যে বাবু কে আজ রাতেই খুন করা হবে। কিন্তু মাঝি বাবুকে খুলে বলার সাহস পাচ্ছিল না। শুধু এটুকুই বলল- ‘আজ এত দেরী যে, থাকলেইতো চলতো।’ তিনি মঝির কথায় কর্ণপাত না করে সামনের দিকে এগিয়ে যান। যখন বাবু হওয়রের মাঝখানে আসনে অর্থাৎ জনমনিষ্যির বাইরে আসেন, তখনই পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ওথ পেতে থাকা নরপিশাচরা তাঁর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাবু ধুতি পড়তেন। তাদের সাথে অনেক সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে যখন তাঁর ধুতির মধ্যে প্যাচ লেগে যায়, তখনই ধারালো অস্ত্রদ্বারা তাঁর মাথাটাকে শরীর থেকে আলাদা করা হয়। তাঁর লাশ যেন সনাক্ত করা না হয়, সে জন্য তাঁর হাত ও পায়ের মাংসও খুলে ফেলা হয়। কারন বাবুর হাতে তাঁর নাম লেখা ছিল। এ দিকে রাত যত গভীর হচ্ছে ততই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হচ্ছেন স্ত্রী বিনোদিনী সহ পরিবারবর্গ। একসময় রাত প্রভাত হলেও বাবুর খবর না পেয়ে স্ত্রী বিনোদিনী অনেকের বাড়িতে খুঁজ নিলেন। তাতেও বাবুর কোন সন্ধান না পেয়ে পাগল প্রায়। এ সময় বাবুর ভ্রতুস্পুত্র রাধিকা চৌধুরী ও গ্রামের আকল দাশ এক জরুরী প্রয়োজনে বানিয়াচং এর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওয়ানা হলেন। বাড়ি থেকে প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা পার হয়েই সতী নদীর তীরবর্তী খাগড়াকান্দি বন্দে শ্যামাপদ দাশের জমির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ আকল দাশ দেখেন ক্ষেতের ধানগাছ গুলি এলোমেলোভাবে ভাঙ্গা। সাথে সাথে তাঁরা দুজন এগিয়ে আসলে দেখতে পান মস্তকহীন উল্টা করে রাখা লাশ। রাধিকা পাঞ্জাবি দেখে অনেকটা অনুমান করে লাশটা চিৎ করতেই দেখেন জগৎ বাবুর মস্তকহীন লাশ। সাথে সাথে গ্রামবাসীকে খবর দিলে সারা গ্রাম জুড়ে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাকালকান্দি গ্রামের আকাশ সেদিন মেঘে ডাকা ছিল। জগৎ সরকার হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে এক ট্রেজেডি রচিত হয়ে ছিল। সাথে সাথে বানিয়াচং থানায় খবর দিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ পাঠানো হয়। পরে মস্তক বিহীন অবস্থায়ই হবিগঞ্জের মহাশশ্বান ঘাটে অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় জগৎ সরকারের। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনে এতদ্বঅঞ্চলের এমন কোনও নেতৃত্বস্থানীয় লোক নেই যে, তাঁর বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা এবং খোঁজ-খবর নেন নি। ঐ বছর জগৎ সরকার হত্যাকান্ড ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
জগৎ সরকারের মৃত্যুতে এতদ্বঅঞ্চলের সামাজিকভাবে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা বিগত ৫০ বছরেও পূরণ হয়নি। আশাকরি মাকালকান্দি গ্রামের তরুণ প্রজন্ম ট্রেজেডিক এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে আরও বিশদভাবে গবেষণা করবে এবং জগৎ সরকারের জীবন ও কর্মকে নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত করবে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নাই, কিন্তু তাঁর কর্ম, সৃষ্টি ও আদর্শ বেঁচে থাকবে অনাদিকাল। পরিশেষে তরুন প্রজন্মকে জগৎ সরকারের স্মৃতিরক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানাই এবং তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমার স্বরচিত পংক্তির মাধ্যমে নিবন্ধের ইতি টানছি –
সতী, কাটারী, লাল বুরুঙ্গী
যত নদী-বিল-খাল
জগৎ সরকারের রক্ত বুকে
বইবে অনাদিকাল।
লেখক : গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক, পাঠাগার বার্তা।
তথ্যসূত্রের কৃতজ্ঞতা : বিভিন্ন সময়ে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করেছেন- বাবু সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাস (সাবেক চেয়ারম্যান, কাগাপাশা ইউপি, বানিয়াচং), বাবু কবিন্দ্র তালুকদার (সাবেক চেয়ারম্যান, শাল্লা), স্বর্গীয় রবীন্দ্র চন্দ্র দাস (প্রাক্তন শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব; মুক্তাহার), স্বর্গীয় হিমাংশু রঞ্জন চৌধুরী (মাকালকান্দি), সুষেন চন্দ্র দাশ (সাবেক মেম্বার, জগন্নাথপুর, নবীগঞ্জ), রাধিকা রঞ্জন চৌধুরী (জগৎ সরকার মহোদয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জগত সরকার হত্যাকান্ডের মামলার বাদী), যশোদা চৌধুরী (সাবেক ইউপি সদস্য ও জগত সরকার মহোদয়ের পুত্র), মৃনাল কান্তি চৌধুরী ভক্ত (প্রাক্তন শিক্ষক, মাকালকান্দি), জয়ন্ত চৌধুরী (জগৎ সরকার মহোদয়ের পুত্র), অজন্তা চৌধুরী (জগৎ সরকার মহোদয়ের কন্যা), গোপেন্দ্র দাশ (জগৎ সরকার মহোদয়ের জামাতা) এবং গবেষণা সহকারী জার্নেল চৌধুরী জনি (ছাত্রনেতা সিলেট, তরুন সমাজসেবক, গ্রাম : মাকালকান্দি)।
Leave a Reply