স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতার ৫৫ জন বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বই, ক্রেস্ট, সনদপত্র ও অফিসের নামাঙ্কিত স্মারক ব্যাগ বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত।
গতকাল (১৬ নভেম্বর, শনিবার) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য লেখক, চট্টগ্রাম এর গর্বিত সন্তান, সরকারি সিটি কলেজ এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন হরিশংকর জলদাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অত্র দপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাছান।
অত্র দপ্তরের প্রধান, সহকারী পরিচালক মো: মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি উপস্থা্পনা করেন অত্র দপ্তরের সহকারী লাইব্রেরিয়ান টিংকু দে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উপস্থিত সকলকে বই ও গ্রন্থাগারের সাথে সম্পর্ক বিনির্মাণের উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বই এর সাথে আগেকার মানুষের ঐতিহ্যগত একটি সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন যে, আগে যখন আমরা আমাদের বাল্যকালে স্কুলে যেতাম, তখন অল্প বই থাকতো, আর সেই বইগুলো পরম যত্নে বুকে আগলে ধরে আমরা স্কুলে যেতাম। এখন শিক্ষার্থীদের বই এর সংখ্যা এত পরিমান বেড়েছে যে, ব্যাগে সেগুলো ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সেসব বই বুকে স্থান পাবার পরিবর্তে এখন বোঝার মতো করে সেই ব্যাগ ভর্তি বই পিঠে বহন করে নিয়ে যেতে হয়। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, আগে আমরা পাঠ্যবই এর বাইরে চুপিচুপি কত বই পড়তাম কিন্তু এখন আমাদের বাসাতে বই এর আর কোন স্থান আমরা রাখতে পারিনা। বক্তব্য প্রদানের পাশাপাশি প্রধান অতিথি উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর সেশনে মিলিত হন। তিনি উৎসুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তার লেখনী ও লেখক জীবন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। কর্ণফুলী নদী পাড়ের সন্তান হরিশংকর জলদাস তার সমগ্র লেখক জীবনের অধিকাংশ লেখনীই জলজীবনকে নিয়ে রচনা করেছেন। এছাড়াও তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর জীবনালেখ্যও রচনা করেছেন। এ লেখকের ৪০টিরও অধিক গ্রন্থ রয়েছে।
স্বাগত বক্তা উপস্থিত সকলকে গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে স্বাগতম জানিয়ে বিজয়ীদেরকে উষ্ম অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠান যথাসময়ে আয়োজন করতে না পারার জন্য তার পেছনের বিভিন্ন কারণ জানিয়ে আন্তরিক দুঃক্ষ প্রকাশ করেন। আগামীতে গ্রন্থাগারের বিভিন্ন আয়োজনে সকলের ধারাবাহিক উপস্থিতি কামনা করেন। সকলকে নতুন রুপের নতুন গ্রন্থাগার ভবনে অগ্রীম আমন্ত্রণ জানান।
সভাপতি তার বক্তব্যে মানুষের সবচাইতে নিঃস্বার্থ ও পরম বন্ধু বই এর সাথে কিভাবে চরম বন্ধুত্ব করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে সকলকে বই ও গ্রন্থাগারমুখী হবার জন্য উদাত্ত আহবান জানান। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, একজন মানুষের জীবনের সবচাইতে বড় রক্ষা কবজ হচ্ছে তার নিজের জ্ঞান আহরণের প্রবল তৃষ্ণা। এই তৃষ্ণা যে কোন মানুষের একবার যদি তৈরী হয়ে যায় তাহলে জীবনের যে কোন সংকটকালে, যে কোন পরিস্থিতে মানুষকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তাই তিনি সকলকে পরম বন্ধু হিসেবে বই এর সাথে সম্পর্ক আরো অটুৃট করার আহবান জানান। পরিশেষে তিনি অনুষ্ঠান আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন।