1. admin@pathagarbarta.com : admin :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের দুইদিনব্যাপী সাহিত্য পর্যটন মিশন মহেশখালী কক্সবাজার ৮ ও ৯ নভেম্বর নবীগঞ্জে শারদ সংকলন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্যোগে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সৌম্যেন অধিকারীর কণ্ঠে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্মরণে প্রথম বাংলা গান মিডল্যান্ডস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ ইউকে সভায় বার্মিংহামে বিজয় দিবস পালনের সিদ্ধান্ত লেখা আহবান ইউকের বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার লন্ডনে আনন্দ ও উৎসবে দ্বাদশ বাংলাদেশ বইমেলা এবং সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

একজন ফজলুল হক চৌধুরী : সকলের সেলিম ভাই

পাঠাগার বার্তা
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ২৪৩৩ বার পঠিত

একজন ফজলুল হক চৌধুরী : সকলের সেলিম ভাই

রত্নদীপ দাস (রাজু)

“নবীগঞ্জের মাটিরে,
সোনার চেয়ে খাঁটিরে।
গানে ভরা প্রাণে ভরা,
সবুজ শীতল পাটিরে…।”
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী নকুল বিশ্বাস অনেক বছর আগে নবীগঞ্জ জে, কে হাইস্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত একটি কনসার্টে গানটি গেয়ে ছিলেন। শৈশবে শুনা গানটি আজও আমার মনে দোলা দেয়। নবীগঞ্জ বৃহত্তর সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী পুরাতন জনপদ। সোনার চেয়ে খাঁটি এই মাটিতে জন্ম হয়েছে অনেক ক্ষণজন্মা গুণীজনের। যাঁরা স্বমহিমায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেখেছেন অবদান। উজ্জ্বল করেছেন জন্মভূমি নবীগঞ্জের নাম। তাঁদের কেউ শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, কবি-সাহিত্যিক, গবেষক, দেশপ্রেমিক যোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতা। তেমনি একজন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি মো: ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম।

নবীগঞ্জ উপজেলার চলমান সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক আলোচিত ও অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব সেলিম ভাই। পোষাকি নাম মো: ফজলুল হক চৌধুরী। কিন্তু নবীগঞ্জবাসী, পরিচিতজন, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি ‘সেলিম ভাই’ এই নামেই তিনি বিখ্যাত ও সুপরিচিত। তিনি পূর্ব বাংলার সিলেট জেলাধীন নবীগঞ্জ থানার মান্দারকান্দি পরগণার চরগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত আব্দুল হক চৌধুরী ও মাতা সুফিয়া হক চৌধুরী। দুই ভাই ও ৭ বোনের মধ্যে তিনি চতুুর্থ। পড়াশোনা করেন সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও নবীগঞ্জ জে,কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মো: আব্দুল হক চৌধুরী স্বাধীনতাত্তোর কালে নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও নবীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি নবীগঞ্জ থানা ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর বড় চাচা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মো: আব্দুল আজিজ চৌধুরী ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ ও ১৯৭০’র নবীগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ)। পিতামহ প্রয়াত আরজদ চৌধুরী ছিলেন নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন কাউন্সিলের (তখন ইউনিয়ন পরিষদের নাম ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিল) সদস্য (বিডি মেম্বার-১৯৬০) ও মাওলানা ভাসানীর আদর্শের অনুসারী। ছাত্রাবস্থায়ই তাঁর নেতৃত্বগুণ ও বহুমাত্রিক প্রতিভা ফুটে ওঠে এবং পূর্বজদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অনেকটাই সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হন।

সেলিম ভাই পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ছাত্র জীবনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং একটা সময় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ নবীগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও দীর্ঘদিন আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করনের লক্ষ্যে সরকার পুনরায় উপজেলা পরিষদ চালু করলে এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং প্রথম বারের মতো ভাইস-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করলে, তিনি নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং সিলেট বিভাগের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার হাদী গাজী মৃত্যু বরন করলে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

সেলিম ভাইয়ের দিন শুরু হয় লোকজনের আর্জি শুনে। সরকারি অফিসের পাশাপাশি তাঁর বাড়ির রান্না ঘর পর্যন্ত সকল পর্যায়ের মানুষদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ঘুম থেকে উঠে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত এলাকার সমস্যাবলী সমাধানে তৎপর। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত, উদার মানবিক চেতনায় বিশ্বাসী এই কর্মঠ নেতা কাউকে কোন বিষয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন না। সরকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করনের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ চালু করলেও চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের জন্য যা বরাদ্দ প্রদান করা হয় তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। যার ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর ভোটে নির্বাচিত হলেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়াতে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তাঁকে প্রায়ই বিমর্ষ দেখা যায়। কিন্তু তাঁর কাছে কেউ উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের জন্য আসলে, প্রয়োজনীয় অর্থায়ন দিতে না পরলেও কথা দিয়ে হলেও সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

তাঁর সবচেয়ে ক্যারিসমেটিক বিষয় হলো তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বিকেও সহজে বশে আনতে সক্ষম হন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক শিষ্টাচার যেখানে প্রায় লুপ্ত, সেখানে তাঁর অবস্থানটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাঁর কর্মিদের উপর যারা নির্যাতন করেছিল, তিনি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিকেও গ্রহন করেন আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সাথে। তাঁর আরেকটি বড় গুণ হলো তিনি একজন নিরপেক্ষ সালিশ বিচারক। রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি তিনি সমানভাবে সামাজিক অঙ্গনেও জনপ্রিয়। তাঁর নির্বাচনী এলাকা নবীগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় বড়ো বড়ো বিচার-বৈঠকে জটিল সমস্যা সমাধানে তিনি ছুটে যান এবং নিরপেক্ষভাবে সমাধানের চেষ্টা করেন। এমনও দেখা গেছে যে, যাঁরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনেক কষ্ট করে সালিশ-বিচারে নিয়েছেন, কিন্তু রায় দিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক কার্যও যথা সম্ভব সচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতার সাথে করে যাচ্ছেন।

পারিবারিক জীবনে তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রয়াত নজরুল ইসলাম চৌধুরীর তৃতীয় সন্তান শাহিনূর আক্তার চৌধুরী পান্নার সাথে ১৯৯৯ খ্রি. প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। শাহিনূর আক্তার চৌধুরী পেশাগত জীবনে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সুগৃহীনি। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে তাঁর কাঁধেই পুরো পরিবারের দায়িত্ব। তাঁদের চার কন্যা ও এক পুত্র।

শুরু করেছিলাম নবীগঞ্জ উপজেলার গুণীজনদের কথা দিয়ে। এই নবীগঞ্জের সার্থক সন্তান ‘সেলিম ভাই’। যিনি তাঁর মেধা, মনন, অর্থ, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নবীগঞ্জের মানুষের কল্যাণে। তাঁর অনুজ জাকিরুল হক চৌধুরী সুমন আমেরিকা প্রবাসী। প্রবাসে জীবনযাপন করলেও জন্ম মাটির টান অন্তরে অনুভব করেন। সেই অনুভূতি থেকেই নিজের সহপাঠীদের সার্বিক সহযোগিতা ও অগ্রজের পরামর্শে স্থাপন করেছেন নিজের খ্যাতিমান পিতা প্রয়াত আব্দুল হক চৌধুরী’র নামানুসারে নবীগঞ্জের প্রথম চক্ষু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক চৌধুরী চক্ষু হাসপাতাল’। এ থেকে সেবা পাচ্ছেন নবীগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ। আমাদের এই দেশ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত, দু লক্ষ মা-বোনদের সম্ভ্রম ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। এই দেশকে কোন সরকার কিংবা ব্যক্তি একার পক্ষে গড়া কখনোই সম্ভব হবে না। আর তাই এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

লেখক : গবেষক, রাজনৈতিক কর্মী; সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, নবীগঞ্জ উপজেলা, হবিগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

error: Content is protected !!