অসমাপ্ত আত্মজীবনী
শেখ মুজিবুর রহমান
( মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিক প্রকাশ )
পর্ব-৩
খুলনা জেলার আলাইপুরে মি. রাইন নামে একজন ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেব নীল চাষ শুরু করে এবং একটা কুঠি তৈরি করে। আজও সে কুঠিটা আছে। শেখদের নৌকার বহর ছিল। সেইসব নৌকা মাল নিয়ে কলকাতায় যেত। মি. রাইন নৌকা আটক করে মাঝিদের দিয়ে কাজ করাত এবং অনেক দিন পর্যন্ত আটক রাখত। শুধু শেখদের নৌকাই নয় অনেকের নৌকাই আটক রাখত। কেউ বাঁধা দিলে অকথ্য অত্যাচার করত। তখনকার দিনের ইংরেজের অত্যাচারের কাহিনী প্রায় সকলেরই জানা আছে। শেখরা তখনও দুর্বল হয়ে পড়ে নাই। রাইনের লোকদের সাথে কয়েক দফা দাঙ্গাহাঙ্গামা হল এবং কোর্টে মামলা দায়ের হল। মামলায় প্রমাণ হল রাইন অন্যায় করেছে। কোর্ট শেখ কুদরতউল্লাহকে বলল, যত টাকা ক্ষতি হয়েছে জরিমানা করুন, রাইন দিতে বাধ্য। ঐ যুগে এভাবেই বিচার হত। শেখ কুদরউল্লাহ রাইনকে অপমান করার জন্য আধা পয়সা জরিমানা করল। রাইন বলেছিল," যত টাকা চান দিতে রাজি আছি, আমাকে অপমান করবেন না। তাহলে ইংরেজ সমাজ আমাকে গ্রহন করবে না, কারণ, 'কালা আদমি' আধা পয়সা জরিমানা করেছে।" কুদরতউল্লাহ শেখ উত্তর করেছিল বলে কথিত আছে, "টাকা আমি গুনি না, মেপে রাখি। টাকার আমার দরকার নাই। তুমি আমার লোকের উপর অত্যাচার করেছ, আমি প্রতিশোধ নিলাম।" কুদরতউল্লাহ শেখকে লোকে 'কদু' বলে ডাকত। আজও খুলনা ও ফরিদপুরের বৃদ্ধ মানুষ বলে থাকে মুখে মুখে। " কুদরতউল্লাহ শেখের আধা পয়সা জরিমানার", দু'একটা গানও আছে। আমি একবার মিটিং করতে যাই বাগেরহাটে, আমার সাথে জিল্লুর রহমান এডভোকেট ছিল। ট্রেনের মধ্যে আমার পরিচয় পেয়ে এক বৃদ্ধ গল্পটা আমায় বলেছিল। খুলনা জেলায় গল্পটা বেশি পরিচিত।
শেখ কুদরতউল্লাহ ও একরামউল্লাহ শেখের মৃত্যুর দুই এক পুরুষ পর থেকেই শেখ বাড়ির পতন শুরু হয়। পর পর কয়েকটা ঘটনার পরেই শেখদের আভিজাত্যটাই থাকল, অর্থ ও সম্পদ শেষ হয়ে গেল।
ইংরেজরা মুসলমানদের ভালো চোখে দেখত না। রানী রাসমণি হঠাৎ জমিদার হয়ে শেখদের সাথে লড়তে শুরু করলেন, ইংরেজ ও তাঁকে সাহায্য করল। কলকাতার একটা সম্পত্তি ও উল্টাডাঙ্গার আড়ত শেখদের সম্পত্তি ছিল। এই সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন শেখ অছিমুদ্দিন। আবার জমিদারি নিয়েও রাসমণির স্টেটের সাথে দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগেই ছিল। শেখবাড়ি থেকে তিন মাইল দুরে শ্রীরামকান্দি গ্রামে তমিজুদ্দিন নামে এক দুর্ধর্ষ লোক বাস করত।
(চলবে)
সম্পাদক ও প্রকাশক : রত্নদীপ দাস (রাজু)
মোবাইল : +৮৮০১৭৩৭-৯১২৪৯৬
ইমেইল : pathagarbarta@gmail.com
info@pathagarbarta.com
Copyright © 2024 পাঠাগার বার্তা. All rights reserved.