অসমাপ্ত আত্মজীবনী
শেখ মুজিবুর রহমান
( মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিক প্রকাশ )
পর্ব-২
শেখ বংশের যে একদিন সুদিন ছিল তার প্রমাণস্বরুপ মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের দ্বারা তৈরি চকমিলান দালানগুলি আজও আমাদের বাড়ির শ্রীবৃদ্ধি করে আছে। বাড়ির চার ভিটায় চারটি দালান। বাড়ির ভিতরে প্রবেশের একটি মাত্র দরজা, যা আমরা ছোট সময় দেখেছি বিরাট একটি কাঠের কপাট দিয়ে বন্ধ করা যেত। একটা দালানে আমার দাদা থাকতেন। এক দালানে আমার মামা আজও কোন মতে দিন কাটাচ্ছেন। আর একটা দালান ভেঙ্গে পড়েছে, যেখানে বিষাক্ত সর্পকুল দয়া করে আশ্রয় নিয়েছে। এই সকল দালান চুনকাম করার ক্ষমতা আজ আমাদের অনেকেরই নাই। এই বংশের অনেকেই এখন এ বাড়ির চারপাশে টিনের ঘরে বাস করেন। আমি এই টিনের ঘরের এক ঘরে জন্মগ্রহণ করি।
শেখ বংশ কেমন করে বিরাট সম্পদের মালিক থেকে আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে গিয়েছিল তার কিছু কিছু ঘটনা বাড়ির মুরুব্বিদের কাছ থেকে এবং আমাদের দেশের চারণ কবিদের গান থেকে জেনেছি। এর অধিকাংশ যে সত্য ঘটনা এ সমন্ধে আমার কোন সন্দেহ নাই। শেখ বংশের সব গেছে, শুধু আজও তারা পুরাতন স্মৃতি ও পুরানো ইতিহাস বলে গর্ব করে থাকে।
শেখ বোরহানউদ্দিন কোথা থেকে কিভাবে এই মধুমতির তীরে এসে বসবাস করেছিলেন কেউই তা বলতে পারে না। আমাদের বাড়ির দালানগুলির বয়স দুইশত বছরেরও বেশি হবে। শেখ বোরহানউদ্দিনের পরে তিন চার পুরুষের কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে শেখ বোরহানউদ্দিনের ছেলের ছেলে অথবা দু'এক পুরুষ পরে দুই ভাইয়ের ইতিহাস পাওয়া যায়। এঁদের সমন্ধে অনেক গল্প আজও শোনা যায়। এক ভাইয়ের নাম শেখ কুদরতউল্লাহ, আর এক ভাইয়ের নাম শেখ একরামউল্লাহ্। আমরা এখন যারা আছি এই ভাইয়ের বংশধর। এই দুই ভাইয়ের সময়েও শেখ বংশ যথেষ্ট অর্থ ও সম্পদের অধিকারী ছিল। জমিদারির সাথে বিরাট ব্যবসাও ছিল।
শেখ কুদরতউল্লাহ ছিলেন সংসারী ও ব্যবসায়ী, আর শেখ একরামউল্লাহ্ ছিলেন দেশের সরদার, আচার বিচার তিনিই করতেন।
শেখ কুদরতউল্লাহ ছিলেন বড় ভাই। এই সময় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশ দখল করে কলকাতা বন্দর গড়ে তোলে। ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেবরা এই দেশে এসে নীল চাষ শুরু করে। শেখ কুদরতউল্লাহ সমন্ধে একটা গল্প আজও অনেকে বলাবলি করে থাকে এবং গল্পটা সত্য।
(চলবে)
সম্পাদক ও প্রকাশক : রত্নদীপ দাস (রাজু)
মোবাইল : +৮৮০১৭৩৭-৯১২৪৯৬
ইমেইল : pathagarbarta@gmail.com
info@pathagarbarta.com
Copyright © 2024 পাঠাগার বার্তা. All rights reserved.