অসমাপ্ত আত্মজীবনী
শেখ মুজিবুর রহমান
(মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিক প্রকাশ)
পর্ব-৫
সিআইডি এই কথা শুনতে পেল ওদের বাড়ির পিছনে পালিয়ে থেকে। তার কয়েক দিন পরেই তিন ভাই ও বোন গ্রেপ্তার হল এবং স্বীকার করতে বাধ্য হল তারাই তাদের বাবাকে হত্যা করেছে।
শেখরা মুক্তি পেল আর ওদের যাবজ্জীবন জেল হল। শেখরা মামলা থেকে বাঁচল কিন্তু সর্বস্বান্ত হয়েই বাঁচল। ব্যবসা নাই, জমিদারি শেষ, সামান্য তালুক ও খাস জমি, শেখ বংশ বেঁচে রইল শুধু খাস জমির জন্য। এদের বেশ কিছু খাস জমি ছিল। আর বাড়ির আশপাশ দিয়ে কিছু জমি নিস্কর ছিল। খেয়ে পরার কষ্ট ছিল না বলে বাড়িতে বসে আমার দাদার বাবা চাচারা পাশা খেলে দিন কাটাতেন। সকলেই দিনভর দাবা আর পাশা খেলতেন, খাওয়া ও শোয়া এই ছিল কাজ। এরা ফার্সি ভাষা জানতেন, বাংলা ভাষার উপরও দখল ছিল। রেণুর দাদা আমার দাদার চাচাতো ভাই। তিনি তাঁর জীবনী লিখে রেখে গিয়েছিলেন সুন্দর বাংলা ভাষায়। রেণুও তার কয়েকটা পাতা পেয়েছিল যখন তার দাদা সমস্ত সম্পত্তি রেণু ও তার বোনকে লিখে দিয়ে যান তখন। রেণুর বাবা মানে আমার শ্বশুর ও চাচা তাঁর বাবার সামনেই মারা যান। মুসলিম আইন অনুযায়ী রেণু তার সম্পত্তি পায় না। রেণুর কোনো চাচা না থাকার জন্য তার দাদা সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। আমাদের বংশের অনেক ইতিহাস পাওয়া যেত যদি তার জীবনীটা পেতাম। কিন্তু কে বা কারা সেটা গায়েব করেছে বলতে পারব না, কারণ অনেক কথা বের হয়ে যেতে পারে। রেণু অনেক খুঁজেছে পায় নাই। এরকম আরো অনেক ছোটখাটো গল্প আছে, কতটা সত্য কথাটা মিথ্যা বলতে পারব না।
যাক শেখদের দুর্দিন আসলেও তারা ইংরেজদের সহ্য করতে পারত না। ইংরেজকে গ্রহণ করতে না পারায় ও ইংরেজি না পড়ায় তারা অনেক পিছনে পড়ে গেল। মুসলমানদের সম্পত্তি ভাগ হয় অনেক বেশি। বংশ বাড়তে লাগল, সম্পত্তি ভাগ হতে শুরু করল, দিন দিন আর্থিক অবস্থাও খারাপের দিকে চলল। তবে বংশের মধ্যে দুই একজনের অবস্থা ভালই ছিল।
আমার দাদাদের আমল থেকে শেখ পরিবার ইংরেজি লেখাপড়া শুরু করল।
(চলবে)
Leave a Reply