অধরা পাঠাগার ও আমাদের গ্রাম
আজমুল আজিজ
আমাদের গ্রামে তখনও কাঁচা রাস্তা, বিদ্যুৎ নেই, ডিস লাইন নেই। এককথায় গ্রামে তখন আধুনিকতার সামান্যতমও ছোঁয়া লাগেনি। এমন একটি গ্রামেই আমার বেড়ে উঠা। গ্রামটির নাম ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম। ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গ্রামটি অবস্থিত। ২০০৯ সালে এস.এস.সি তে জিপিএ-৫ (A)+ প্লাস পাওয়ার পরে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে এইচ.এস.সি পাশ করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে ছুটি হলেই গ্রামে ফিরে যেতাম।গ্রামে তখন শিক্ষার হার একেবারেই কম। গ্রামে ঘুরতাম আর ভাবতাম কিভাবে গ্রামের উন্নয়ন করা যায়,শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা যায়। গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম আমাদের গ্রাম আশেপাশের গ্রাম থেকে পড়ালেখায় অনেকটাই পিছিয়ে থাকার প্রধান কারন আমাদের গ্রামে কোন স্কুল-কলেজ নেই । নেই কোন বাজার , নেই খেলার মাঠ। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে চিন্তা করলাম গ্রামের জন্য এবছরের মাঝেই কিছু একটা করতে হবে ।সে বছর বাড়ি থেকে দেওয়া ঈদুল আযহার মার্কেট করার টাকা ও টিউশনিরর জমানো কিছু টাকা দিয়ে নীলক্ষেত থেকে প্রায় শ'দুয়েক বই কিনে বাড়িতে ফিরলাম।গ্রামের অনেকের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলাম। শুরুর দিকে অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল। কিন্তুু আমার সিদ্ধান্তে আমি অনড় ছিলাম। বাবা-মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে আমাদের বাড়ির পাশেই ফাঁকা জায়গায় একটি টিনের ঘর তৈরি করলাম। পাঠাগার তৈরী করার সময়ে কয়েকজন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও কাজের সময় গ্রামের যুবকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগীতা করেছিল। প্রাথমিকভাবে পাঠাগারটি করতে যত টাকা লেগেছিল সেটা আমার মায়ের থেকে নিয়েছিলাম। ২০১৪ সালের ২১শে অক্টোবর অধরা পাঠাগারটির পথচলা শুরু। পাঠাগারটি এখন একতলা বিল্ডিংয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।৭২০ বর্গ স্কয়ার ফিট জায়গা জুড়ে পাঠাগারটির অবস্থান।ফরিদপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মনজুর হোসেন বুলবুল পাঠাগারটির ভবন নির্মাণের জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন।এখন আমাদের গ্রামের কয়েকজন ছেলে মেয়ে অনার্সে অধ্যায়নরত। অধরা পাঠাগারের বর্তমান সভাপতি হাসিবুল ইসলাম ঢাকা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। সাধারণ সম্পাদক এস.এম রাজু আহম্মেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনান্স বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। বর্তমানে আমাদের গ্রামের পড়ালেখার হার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।পাঠাগারের সাথে জড়িত সবাই এখন স্কুল-কলেজে অধ্যায়নরত।
পড়ালেখার হার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ; অধরা পাঠাগারের সহযোগীতায় গ্রামের অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পেয়েছে।এছাড়া পাঠাগারের কল্যাণে গ্রামে নিয়মিত উন্নত জীবন গঠনে শিক্ষার ভূমিকা শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়,কুইজ প্রতিযোগিতা হয়। পাঠাগারের যে কমিটি রয়েছে তারাই এই অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে।পাঠাগারের তত্ত্বাবধানে গ্রামে "ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম সোসায়েল ওয়েলফেয়ার ক্লাব নামে একটি ক্লাব রয়েছে।এই ক্লাবের হয়ে তরুণ ও যুবকরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহন করে।
পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পরে আমাদের গ্রামের সার্বিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য দেশের উন্নয়ন ও দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিতে পড়ালেখার বিকল্প নেই।মানবিক জাতি গঠনে প্রতি গ্রামে গড়ে উঠুক একটি করে পাঠাগার। তাহলে দেশ অবশ্যই পরিবর্তন হবে। আমাদের জাতীয় স্লোগান হোক দেশের উন্নয়নে প্রতি গ্রামে হোক একটি করে পাঠাগার।
লেখক : আজমুল আজিজ, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, অধরা পাঠাগার, ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম , মহিষারঘোপ, আলফাডাঙ্গা , ফরিদপুর।
সম্পাদক ও প্রকাশক : রত্নদীপ দাস (রাজু)
মোবাইল : +৮৮০১৭৩৭-৯১২৪৯৬
ইমেইল : pathagarbarta@gmail.com
info@pathagarbarta.com
Copyright © 2024 পাঠাগার বার্তা. All rights reserved.